ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
অস্থির বাজার: বেড়েছে তেল-চাল-ডাল-পেঁয়াজসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম
Published : Saturday, 29 May, 2021 at 12:00 AM
হঠাৎ করেই নিত্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম এক লাফে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। আরও দাম বাড়ার আশঙ্কায় ক্রেতারাও বেশি বেশি সয়াবিন তেল কিনছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। লবঙ্গের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা। শুধু তাই নয়, নতুন ধানের চাল বাজারে আসার পরও বেড়েছে চালের দাম।
শুক্রবার (২৮ মে) রাজধানীর খুচরা বাজারে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের চাল কেজিতে ২-৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের ডালের দামও বেড়েছে। এর ফলে গত সপ্তাহের তুলনায় বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্য কিনতে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
গত সপ্তাহে ১১৮ টাকায় খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যেতো। তবে এই সপ্তাহে সেই খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকা। ৬৩৫ টাকার ৫ লিটার বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকায়। ১৩৫ টাকার এক লিটার বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। বাজারে দেখা যায়, ১০৭ টাকা লিটার খোলা পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা। ১১০ টাকা লিটার সুপার বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকা।
এদিকে দেশের ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন তেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৯ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এই ঘোষণা দেয়। তেলের দাম বাড়িয়ে নতুন মূল্য তালিকাও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, নতুন দামে এখন থেকে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকায় বিক্রি হবে, যা ১৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছিলো। এছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল তেলের দাম পড়বে ৭২৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১২৯ টাকা ও পাম সুপার তেল ১১২ টাকা দরে কিনতে হবে ক্রেতাদের। সংগঠনটির এই ঘোষণার পর শুক্রবার বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, দেশের বাজারে গতবছরের অক্টোবরেও প্রতি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫০৫ টাকা। এরপর থেকে তা বাড়ছেই। নতুন দাম কার্যকর হলে গত অক্টোবরের তুলনায় এখন পাঁচ লিটার তেল কিনতে মানুষের ব্যয় বাড়ছে ২২৩ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে গত এক বছরের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। ৫ লিটার বোতলের দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশ  এবং এক লিটার বোতলের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। গক এক বছরের ব্যবধানে খোলা পাম তেলের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।
বাজারে বর্তমানে নতুন চালের পর্যাপ্ত স্টক থাকলেও বাজারে অস্থিরতা লেগেই আছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম বাড়তি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৫৫ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা। গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৬২ টাকা কেজি, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা।
এছাড়া গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি, এখন সেই চাল চিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহের ৫২ টাকা কেজি চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৫৪ টাকা। বাজারে  প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সাত দিন আগেও ছিল ৪৭-৪৮ টাকা। মাঝারি আকারের চাল প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গেল সপ্তাহে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া সরু চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৪ টাকায়। যা সপ্তাহ খানেক আগেও ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সরকারি হিসাবেও বলা হচ্ছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল কেজিতে ২ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ৬ শতাংশ ও সরু চাল কেজিতে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দেখা যায় মশুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে বড় দানার মশুর ডালের প্রতি কেজির দাম ছিল ৭৫ টাকা। এখন সেই ডালের দাম ৮০ টাকা কেজি। আর যে ডালের দাম ছিল ৯০ টাকা কেজি। এখন সেই ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি। শুত্রবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বড় দানার মসুরের ডাল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ৭ দিন আগে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের মসুরের ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকা। যা গেল সপ্তাহে ছিল ৯০ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মসুর ডাল সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। একইভাবে গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এখন ৪৫ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে, কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এদিকে প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ২০ টাকা ছিল।  প্রতি কেজি দেশি রসুন ২০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরা ২০ টাকা বেড়ে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি লবঙ্গ ১০০ টাকা বেড়ে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ২৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর কাঁচা বাজার সবজির বাজারও চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবজির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি। বরং কিছু কিছু সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এসব কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে আগের মতো ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। শুক্রবার শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ঢেঁড়সের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩০ টাকা হালি বিক্রি হওয়া কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। গাজরের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ঝিঙে আগের মতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এক কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।