এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ||কুমিল্লায়
দেবীদ্বারে উদ্ধার হওয়া শিশুটির পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার দৈনিক
কুমিল্লার কাগজে ‘দেবীদ্বারে উদ্ধার হওয়া মেয়েটির পরিচয় নিয়ে বিপাকে পুলিশ’
শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ দেখে শিশুটির স্বজনরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেন।
তারা জানান, উদ্ধার হওয়া মেয়েটি ‘কাবেরী’ নয় তার নাম ‘মিলি’। বাড়ি মুরাদনগর
উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর প্রামে।
এর আগে গত বুধবার দিবাগত
রাতে দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা বাস ষ্টেশন থেকে ১০ বছর বয়সী মেয়েটিকে
উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার পরিচয় না পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে সমাজ
সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেইফ কাস্টডিতে হস্তান্তর করা হয়।
দেবীদ্বার
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আর,এম,ও ডাঃ মঞ্জুর হোসেন জানান, দেবীদ্বার
মেডিকেয়ার হাসপাতাল প্রাইভেট লিঃ’ এর অপারেশন থিয়েটার(ওটি)’র কর্মকর্তা
গোলাম মোস্তফার বাসায় মেয়েটির মা’ দির্ঘদিন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছে।
দেবীদ্বার
মেডিকেয়ার হাসপাতাল প্রাইভেট লিঃ’র অপারেশন থিয়েটার(ওটি)’র কর্মকর্তা
গোলাম মোস্তফা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা ‘দৈনিক কুমিল্লার
কাগজ’ পত্রিকায় ‘দেবীদ্বারে উদ্ধার হওয়া মেয়েটির পরিচয় নিয়ে বিপাকে পুলিশ’
শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ দেখে আমার দৃষ্টিগোচর হয়। আমি মেয়েটির ছবি দেখে
নিশ্চিত হই যে তার নাম কাবেরী(১০) নয়, তার নাম আফরোজা জাহান মিলি(১৫),
মেয়েটির বাবার নাম, আলী আহাম্মদ, মাতা রহিমা বেগম, গ্রাম- মুরাদনগর উপজেলার
দারোরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর প্রামে।
সংবাদ পেয়ে মেয়েটির মা রহিমা বেগম
দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানান, তার
মেয়ে গত ২/৩ মাস যাবৎ মানষিক সমস্যায় ভোগছে। এরই মধ্যে আরো ৩/৪বার নিখোঁজ
হলেও নিজে নিজেই বাড়িতে ফিরে এসেছে।
তিনি আরো জানান, আমার মেয়ে মিলির
বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকেন, পেশায় বদলী শ্রমিক, আমি দেবীদ্বার পুরাতন বাজার
এলাকার কাজীবাড়ির কাজী নজরুল পুলিশের বাসায় ভাড়া থেকে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে
কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছি। আমার ২ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মিলা
(কাবেরী) দ্বিতীয়, তার বয়স ১৫ বছর হবে। সে মুরাদনগর উপজেলার আমপাল দাখিল
মাদ্রসায় নবম শ্রেণীতে পড়ে। মিলি আমার বাবার বাড়ি সিদ্দেশ^রী গ্রামে
মা’(ফিরুজা বেগম)র সাথে থাকে। বড় মেয়ে ইশরাত জাহান রিমি (১৬) চট্রগ্রাম তার
ফুফুর বাসায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করত। ১০/১২ দিন চাকরি করার পর সেখান
থেকে রিমি নিখোঁজ হয়ে যায়, পরবর্তীতে জানতে পারি কক্সজার জেলার চকরিয়া
উপজেলার মরণগোনা গ্রামের সাগর মিয়া নামে একটি ছেলে রিমিকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে
করে ফেলে। শোনেছি ছেলেটি বেকার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের, এখন মেয়েটিকে
যৌতুকের জন্য প্রতিনিয়ত মারধর করে, আমাদের এখানে আসতেও দেয়না। মেয়েটিকে
মারের হাত থেকে রক্ষা করতে ঈদের আগে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। মেয়েটিকে ওরা
দিচ্ছেনা, আমাদের যেতেও বারন করছে। যৌতুকের দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা বিকাশে
পাঠাবার চাপ দিচ্ছে।
আমার মেয়ে মিলি (কাবেরী) যে ঠিকানা দিয়েছে তা ছিল
তার বোনের শ^শুর বাড়ির ঠিকানা, নানীর নাম দিয়েছে মায়ের জায়গায় আর পিতার নাম
অন্য একজনের। পত্রিকায় মিলির যে পরিচয় ছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যে তবে ছবি
দেখে তাকে সনাক্ত করেছি। সে মুরাদনগর যে মহিলা ডাক্তারের বাসায় দুই বছর
বন্ধী থাকার কথা বলেছে, তা ভিত্তিহীন। আমি আমার মেয়েকে সেইফ কাষ্টডি থেকে
ফিরিয়ে আনতে থানায় যোগাযোগ করলে, তারা কুমিল্লা সমাজসেবা অফিসের ঠিকানা
দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সমাজসেবা কার্যালয়ের
প্রভিশনাল অফিসার মো. সোহাগ পাটোয়ারী বলেন, নিখোঁজ কাবেরী’র পিতা, মাতা,
জাতীয় পরিচয়পত্র ও মেয়েটির জন্মনিবন্ধন সহ সনাক্তকরণের যাবতীয় প্রমানাদী
নিয়ে আসলে এবং উভয়ের মুখোমুখী পরিচয় নিশ্চিত হলে আমারা তাকে তার অভিভাবকের
নিকট হস্তান্তর করে দেব।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি তদন্ত)
ছমিউদ্দিন বলেন, সেইভ কাষ্টডিতে পাঠানো মেয়ের মা দাবীকারী রহিমা বেগম নামে
একজন মহিলা এসেছিলেন, মেয়ে এবং তার মা’ দাবীকারীর ঠিকানা মিল না থাকায়
যাবতীয় প্রমানাদী নিয়ে কুমিল্লা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেছি,
ওনারা বিষয়টি তদন্ত করে নিশ্চিত হলে মেয়েটিকে নিয়ে আসতে পারবে।