রাজশাহী
বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশে গত এক দিনে শনাক্ত রোগীর
সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে; মৃতের মোট সংখ্যা পৌঁছে গেছে ১৩ হাজারের
কাছাকাছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪
ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে;
মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের।
এর আগে এক দিনে এরচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল
গত ২৮ এপ্রিল, সেদিন ২ হাজার ৯৫৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা
জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর বুধবার শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৫৩৭ জন
নতুন রোগী।
গত এক দিনে নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর
সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জন হয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২
হাজার ৯৮৯ জন।
সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ২ হাজার ৬১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩০ জন।
গত
বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণের
প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকার পরিস্থিতিই সবচেয়ে খারাপ ছিল। কিন্তু দৈনিক
শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় গত কয়েক দিন ধরেই ঢাকার চেয়ে এগিয়ে বেশি থাকছে
রাজশাহী বিভাগ।
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার
বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় রাজশাহী ও খুলনার ভারত সীমান্তবর্তী
জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
তথ্যে দেখা যায়, গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যেখানে ৫১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত
হয়েছে, সেখানে রাজশাহী বিভাগে পাওয়া গেছে ৮১৫ জন নতুন রোগী। খুলনায় সংক্রমণ
ধরা পড়েছে ৫৭৮ জনের মধ্যে।
একক জেলা হিসেবে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৩৫৩ জন
নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই সময়ে ঢাকা জেলায় ২৮৮ জন, যশোর
জেলায় ২০০ জন, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় ১৫৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে
যায় এ বছর ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭
হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত
বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ
বছর ১১ মে তা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের
মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৭ কোটি ৪৪ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষের।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১০টি ল্যাবে ১৯ হাজার ৪৪৭টি
নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ২৬ হাজার ২৩৮টি
নমুনা।
বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী সারা দেশে শনাক্তের হার ১৩
দশমিক ২৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনাক্ত
বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮
শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে দৈনিক শনাক্তের হার যেখানে ৬ শতাংশের কম, রাজশাহী বিভাগে তা ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশের বেশি, খুলনা বিভাগে ৩৯ শতাংশ।
জেলাওয়ারি
হিসেবে এদিন যাশোরে শনাক্ত রোগীর হার ৫১ শতাংশ, বাগেরহাটে ৩১ শতাংশ,
খুলনায় ৩০ শতাংশ, রাজশাহীতে ২১ শতাংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯ শতাংশ, আর ঢাকায় ৪
শতাংশের কিছু বেশি।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ৩১ জন পুরুষ আর
নারী ৯ জন। তাদের ৩১ জন সরকারি হাসপাতালে, ৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৩
জন বাসায় মারা যান।
তাদের মধ্যে ২২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৮ জনের
বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ১ জনের বয়স ৩১
থেকে ৪০ বছর, ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
মৃতদের
মধ্যে ৮ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৮ জন রাজশাহী বিভাগের,
৬ জন খুলনা বিভাগের, ২ জন সিলেট বিভাগের এবং ৪ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা
ছিলেন।
এ পর্যন্ত মৃত ১২ হাজার ৯৮৯ জনের মধ্যে ৯ হাজার ৩৫০ জন পুরুষ এবং ৩ হাজার ৬৩৯ জন নারী।