ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ফের দখলে ফুটপাত-সড়কের দুইপাশ
কুমিল্লা নগরী
Published : Friday, 11 June, 2021 at 12:00 AM, Update: 11.06.2021 1:20:35 AM
ফের দখলে ফুটপাত-সড়কের দুইপাশ মাসুদ আলম।। ফের দখল হয়ে পড়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুইপাশ এবং ফুটপাত। এতে নগরীতে দিনদিন যানজটের তীব্রতা বাড়ছে। সেই সাথে বেড়েছে ভোগান্তিও। ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী দোকানগুলো বসিয়ে রাস্তা বন্ধ করলেও কিছুই যেন করার নেই প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। তাদের মতে, রাস্তা থেকে এসব দোকান উঠিয়ে দিলেও পূণরায় বসছে তারা। গত বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় কুমিল্লা নগরীর বেশিরভাগ ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। পরে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় নগরীর সব ফুটপাত দখলমুক্ত করার। এরপর ওই সভার সিদ্ধান্ত মতে ডিসেম্বরের শুরু থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের দুইপাশ এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন।
তিন মাস ব্যাপী জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়মিত ওই উচ্ছেদ ও দখলমুক্ত কর্মকা-ে নগরীর সড়কগুলোতে কিছুটা শৃঙ্খলা তৈরি হয়। অত্যাচার ও ভোগান্তির শিকার নগর বাসিন্দারা জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানায়। কিন্তু ২/৩ মাস না যেতেই আবারও কুমিল্লার সড়কগুলো এখন ভাসমান দোকানিদের দখলে। মূল সড়ক থেকে অলিগলির রাস্তা দখলে নিয়ে দোকান বসানো হয়েছে। বছরের পর বছর রাস্তাার ওপরেই চলছে এসব দোকানের ব্যবসা। আবার যেসব সড়কে জনসমাগম বেশি, সেখানে দোকানের সংখ্যাও বেশি। এতে সড়কে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ। বছর বছর এমন অবস্থা চললেও কোনভাবেই যেন লাগাম টানতে পারছে না দায়িত্বশীল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন সময়ে মূল সড়কের ওপর গড়ে ওঠা দোকানগুলো উচ্ছেদ করলেও সমাধান আসেনি। উচ্ছেদের কিছুক্ষণ পরেই ফের দোকান বসছে। মূল সড়কের ওপর গড়ে ওঠা দোকান উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও অলিগলিতে উচ্ছেদ অভিযান চলে না। অলিগলির রাস্তার ওপরে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর যেন স্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে রাস্তায় যত বেশি মানুষ চলাচল করছে, সেই রাস্তায় তত বেশি দোকান গড়ে ওঠছে।
ফের দখলে ফুটপাত-সড়কের দুইপাশ জনসমাগমের ভিত্তিতে রাস্তার ওপর দোকান বসানোর অর্থের তারতম্য রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, চকবাজার, রাজগঞ্জ বাজার, রাণীর বাজার, চমছম ব্রিজ ছাড়াও কান্দিরপাড় থেকে পুলিশ, রানীর বাজার, শাসনগাছা, রাজগঞ্জ, সালাউদ্দিন, রাজগঞ্জ থেকে মুগলটুলি সড়কসহ নগরীর অধিকাংশ রাস্তার দৃশ্য এটি। যানবাহন, পথচারী চলাচলে রাস্তা নির্মাণ হলেও দখলদার এবং দোকানিদের সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। শহরের রাস্তায় শৃঙ্খলা কখনই আসছে না। এ যেন এক ছন্নছাড়া নগর হয়ে উঠছে কুমিল্লা।
খোরশেদ আলম, আবদল্লাহ আল মামুন ও মীর হোসেনসহ আরও কয়েকজন পথচারী স্থানীয় বাসিন্দা জানান, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মেয়র সাক্কু দুই দুই বার সিটি মেয়র হলেও রাস্তার দৃশ্য বদল হলো না। বছরে পর বছর রাস্তা দখল করে দোকান গড়ে উঠছে। অলিগলি থেকে মূল সড়ক দখল হওয়ায় প্রতিদিন গাড়ি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে গাড়িতে থাকা মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। সুস্থ ও সুন্দরভাবে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাও যাচ্ছে না। হাঁটাচলায় এক প্রকাশ যুদ্ধ করতে হয়। একই সঙ্গে পথচারী চলাচলেও চরম অস্বস্তিতে পড়ছেন। কুমিল্লার রাস্তা দখলে যাওয়ায় অলিগলি থেকে মূল সড়কে রাস্তায় যানজট লাগছে। রাস্তায় চলাচলে ভোগাস্তিতে পড়ায় চাকরিজীবী মানুষ বাড়িতে কিংবা অফিসে গিয়ে মানসিকভাবে খিটখিটে হয়ে যান।
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর, লির্বাটি মোড়, চকবাজার, টমছম ব্রিজ, রানীরবাজার সড়কের পাশে, ফুটপাতে ভ্যানে করে ভ্রাম্যমান ও অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এসব দোকান অভিযান চালিয়ে উঠিয়ে দিলেও পূণরায় রাস্তা দখল করে প্রতিদিন দোকান নিয়ে বসছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের স্ব স্ব ওয়ার্ডের স্থানীয় কিছু ব্যক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে উচ্ছেদের পর সড়কের পাশ এবং ফুটপাত দখল করে এইসব দোকান বসছে। বিনিময়ে এই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
মিজানুর রহমান নামে কুমিল্লা বাদুরতলা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সড়ক থেকে পানির ড্রেন এক হাত উপরে। আবার সেই রাস্তার দুইপাশে দোকান বসায় দুটি গাড়ি ক্রসিং করতে পারছে না। অলিগলির রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন পসরা নিয়ে রাস্তার দুইপাশ হকার এমনভাবে দখল করে, দুইজন মানুষও ঠিকভাবে চলাচল করতে পারেন না। এ নিয়ে নগরবাসীর মনে চরম বিতৃষ্ণা থাকলেও সমাধান আছে না। মানুষের চলাচলের রাস্তার দুইপাশে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকান, কাঁচাবাজারের দোকান, ফলের দোকান, মাছের বাজারসহ অসংখ্য দোকান বসছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল রানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফুটপাত হকারের দখলে রাস্তা হকারের দখলে মানুষ চলাচল করবে কিভাবে। কুমিল্লা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে জনগণ চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার ফুটপাত দখল করা কয়েকজন ব্যবসায়ীর দাবি, প্রতিদিন চাঁদার বিনিময়ে ফুটপাতে বসে ব্যবসায় করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ফুটপাত ও সড়কের পাশে বসে ব্যবসায় করার জন্য প্রতিটি  একটি নিদিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে একটি চক্রকে। যাদের নামে তারা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
ফুটপাত দখল ও উচ্ছেদের বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন,  সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ফুটপাত ও সড়কের দুইপাশ দখলমুক্ত করেছে। অনেক চেষ্টা করেছি সেটি অব্যাহত রাখতে। কিন্তু একটু সুযোগ পেলেই আবারও বসে বসতে। উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে কান্নাকাটি করছে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা। কুমিল্লাকে যানজট মুক্ত, পরিচ্ছিন্ন নগরী গড়তে এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে খুব শীঘ্রই সিটি কর্পোরেশন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সড়কে যানজট সৃষ্টিকারী এই ভ্রাম্যমান ও অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের বলছি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সামনে এবং ডিসি রোডে ব্যবসা করতে। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনছেন না। আমরা চিন্তা করেছি একটি মাঠের ব্যবস্থা করে সকল ফুটপাত ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করবো।