শিরোপা অভিযানের পথে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে উত্তেজনার পারদ চূড়া স্পর্শ করল ঠিকই। কিন্তু সেখানে ক্রিকেট থাকল কমই! মাঠে সাকিব আল হাসানের বিতর্কিত আচরণের আড়ালে চাপা পড়ল ক্রিকেট, মাঠের লড়াই সবকিছু। বৃষ্টি আর বিতর্কের ঝাপটা পেরিয়ে অবশ্য ম্যাচটাও শেষ হলো। তাতে সাকিবের মোহামেডানের কাছে হেরে শীর্ষস্থান খোয়াল মুশফিকের আবাহনী।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে মোহামেডানের জয় ৩১ রানে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার মোহামেডান ২০ ওভারে তোলে ১৪৫ রান। রান তাড়ায় ষষ্ঠ ওভারে বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। আবাহনীর রান তখন ৫.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৩১। পরে তাদের লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ৯ ওভারে ৭৬। যেতে পারেনি তারা ধারেকাছেও।
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগেই দেখা যায় মাঠে সাকিবের বিতর্কিত সব আচরণ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পক্ষে না পেয়ে স্টাম্পে লাথি মারেন তিনি। একটু পর তিনটি স্টাম্প তুলে মারেন আছাড়। পরে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হলে মাঠ ছাড়ার সময় আবার জন্ম দেন বিতর্কের।
সাকিবের এসব ঘটনার আগে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণে ছিল সাকিবের দলই। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলের হয়ে টপ অর্ডারে খুব ভালো করতে পারেননি আব্দুল মজিদ, পারভেজ হোসেন ইমন ও ইরফান শুক্কুর। তবে মিডল অর্ডারে রান পান সাকিব নিজে ও মাহমুদুল হাসান।
এবারের লিগে ব্যাট হাতে ধুঁকতে থাকা সাকিব খেলেন ৭ ম্যাচে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসটি। ২৫ রানে জীবন পেয়ে মোহামেডান অধিনায়ক করেন ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭।
পরে মাহমুদুলের ২২ বলে অপরাজিত ৩০ ও আবু হায়দারের ৭ বলে ১২ রানের ইনিংসে মোহামেডানের রান পৌঁছায় দেড়শর কাছে।
ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে একেএস স্বাধীন তার মিডিয়াম পেসে নেন ৩ উইকেট।
বৃষ্টিতে আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করে দেওয়ার পর স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন সাকিব।বৃষ্টিতে আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করে দেওয়ার পর স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন সাকিব।রান তাড়ায় আবাহনী জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে যায় শুভাগত হোমের করা প্রথম ওভারেই। ইনিংসের প্রথম বলেই লাইন মিস করে বোল্ড হন আবাহনীর আগের ম্যাচের নায়ক মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তৃতীয় বলে বোল্ড তিনে নামা স্বাধীন।
শুভাগতর পরের ওভারে বিদায় নেন আগের ম্যাচে ফিফটি করা আফিফ হোসেনও।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে আসেন অধিনায়ক সাকিব। তার দ্বিতীয় বলে দারুণ সুইপে ছক্কা মারেন মুশফিক, পরের বলে কাট করে চার। ওই ওভারের শেষ বলেই ম্যাচের রঙ বদলে যাওয়ার শুরু।
সাকিবের বল লাগে মুশফিকের পায়ে। জোরালো আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। কিন্তু আবেদন করার দুই-তিন সেকেন্ডের মধ্যেই এগিয়ে বাঁ পায়ে লাথি মারেন স্টাম্পে। আম্পায়ার ইমরান পারভেজের সঙ্গে ক্ষীপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলতেও দেখা যায় তাকে। এই পর্ব চলে বেশ কিছুক্ষণ।
পরের ওভারের পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি শুরু হলে মাঠকর্মীদের দিকে ইশারায় কাভার আনতে বলেন আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। সাকিব তখন আবার আম্পায়ারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলতে থাকেন কিছু একটা। এরপর হুট করেই তিনটি স্টাম্পই তুলে আছাড় মারেন মাটিতে।
এবারও আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক হয় তার। এবার এক পর্যায়ে গিয়ে উপড়ে ফেলা স্টাম্পের একটি নিয়ে উল্টো করে আবার মাটিতে পোঁতার চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে।
মাঠে উত্তপ্ত পরিস্থিতির শেষ পর্ব সাকিবরা মাঠ ছাড়ার সময়। আবাহনীর ড্রেসিং রুম বা গ্যালারির দিকে অশালীন ভঙ্গি করেন তিনি। এসময় আবাহনীর ড্রেসিং রুমের বাইরে থেকে তার দিকে কিছু বলতে বলতে এগিয়ে যান কোচ খালেদ মাহমুদ। তেড়ে আসেন সাকিবও। মোহামেডানের ক্রিকেটারদের কয়েকজন তখন থামান সাকিবকে। মাঠ ছাড়ার সময় মোহামেডানেরই শামসুর রহমান দৌড়ে আবাহনীর ড্রেসিং রুমের দিকে গিয়ে থামান খালেদ মাহমুদকে।
বৃষ্টিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর যখন আবার শুরু হয়, কঠিন লক্ষ্য তাড়ায় আবাহনী পারেনি নাটকীয় কিছু করতে। সাকিবরা জিতে নেয় সহজেই।
টানা তিন জয়ের শুরুর পর টানা তিন ম্যাচ হেরে আবার জয়ের ফিরল মোহামেডান। আবাহনী হারল সপ্তম ম্যাচে দ্বিতীয়বার। আবাহনীর পরাজয়ে ও একই দিনে অন্য ম্যাচ জিতে প্রাইম ব্যাংক উঠে গেল শীর্ষে।
কিন্তু জয়-পরাজয়, ক্রিকেটীয় লড়াই, সব ছাপিয়ে এই ম্যাচে আলোচিত হয়ে রইল সাকিবের অবিশ্বাস্য আচরণ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান: ২০ ওভারে ১৪৫/৬ (মজিদ ১৬, পারভেজ ২৬, ইরফান ১৪, সাকিব ৩৭, শামসুর ১, মাহমুদুল ৩০*, শুভাগত ১, আবু হায়দার ১২*; সাইফ উদ্দিন ৪-০-২৯-১, মোসাদ্দেক ৪-০-১৯-০, আফিফ ১-০-১৪-০, তানজিম ৪-০-১৭-২, শহিদুল ১-০-৯-০, স্বাধীন ৩-০-২৪-৩, আমিনুল ২-০-১৮-০, আরাফাত সানি ১-০-১০-০)।
আবাহনী: (লক্ষ্য ৯ ওভারে ৭৬) ৯ ওভারে ৪৪/৬ (নাঈম ০, আফিফ ২, স্বাধীন ০, শান্ত ১৫, মুশফিক ১৮*, মোসাদ্দেক ৩, সাইফ উদ্দিন ০, আমিনুল ১*; শুভাগত ৩-০-১৭-৩, মাহমুদুল ২-১-৬-০, সাকিব ১-০-১০-০, তাসকিন ২-০-৫-২, আবু জায়েদ ১-০-৬-১)।
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৩১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শুভাগত হোম।