যুক্তরাষ্ট্রে মহামারীতে মৃত্যুর গতি অনেকটা ধীর হয়েছে; মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ থেকে ৬ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছে চার মাস, প্রথম এক লাখ মৃত্যুর মাইলফলক স্পর্শ করতেও একই সময় লেগেছিলো সেখানে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শীতে মহামারীর সবচেয়ে কঠিন সময়ে মাত্র এক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা এক লাফে তিন লাখ থেকে বেড়ে চার লাখ হয়েছিল। সেই গতি কমে আসায় কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে, কিন্তু টিকাদানের গতিও কমেছে অনেকটা।
এখন সেখানে দিনে ১০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে; অথচ এপ্রিলেও দিনে প্রায় ৩৪ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছিল।
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ।
আর অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন- এমন নাগরিকের সংখ্যা ১৭ কোটি ৩০ লাখের কিছু বেশি, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার যে লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঠিক করেছিলেন, তা পূরণ হবে না বলেই এখন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
বাইডেন আশা করছিলেন, মহামারীর ঘরবন্দি দিন পার করে ওইদিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রবাসী আবার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার ঘোষণা শুনতে পাবে।
সিডিসি জানিয়েছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়া শেষ করার দুই সপ্তাহ পর মানুষের দেহে তা পুরোপুরি কার্যকর হবে বলে ধরা হয়।
করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে ডেল্টা ধরনটি- যেটি ভারতে প্রথম শনাক্ত হ- যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সংক্রমিতদের ১০ শতাংশের মধ্যে সেটি পাওয়া গেছে। এটি আলফা (যুক্তরাজ্যে পাওয়া) ধরনটির চেয়েও দ্রুত ছড়াচ্ছে এখন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের বেশিরভাগ টিকা পেলেও রাজ্যভেদে টিকা গ্রহণের হারে তারতম্য রয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য বলছে, ভারমন্ট রাজ্য সেখানকার ৭১ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি টিকা দিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে মিসিসিপি রাজ্যে এই হার ৩৬ শতাংশ।
সম্প্রতি কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের এক-তৃতীয়াংশ এখনও টিকা নিতে আগ্রহী নন। ফলে রাজ্যগুলো জনগণকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রচার ও পুরস্কার ঘোষণার পথ নিয়েছে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকেও টিকাদান কর্মসূচি জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সোমবার একটি জাতীয় সফরসূচি শুরু করেছেন জনগণকে টিকা নিতে উৎসাহিত করতে।
একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি নোভাভ্যাক্স ঘোষণা দিয়েছে, তাদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা ৯০ দশমিক চার শতাংশ কার্যকর। ৩০ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর ওই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের জন্য এই টিকাটিও অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সেদেশের বাজারে এখন চারটি কোভিড-১৯ টিকা চলে এসেছে।
স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরা
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় সোমবার রাতে ‘গ্র্যান্ড রি-ওপেনিং’ ঘোষণা করেন সেখানকার গভর্নর।
এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাজ্য, যারা মহামারী শুরুর পর প্রথম লকডাউন ঘোষণা করেছিল, তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে।
টিকার দুই ডোজ প্রাপ্তরা এখন সেখানে মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করতে পারবেন, এবং বেশিরভাগ স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তবে ৫ হাজার লোকের বেশি জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে।
মহামারীতে সবচেয়ে নাজুক দশায় পড়া নিউ ইয়র্কও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে শুরু করেছে। সে রাজ্যে টিকা নেওয়া মানুষের হার ৭০ শতাংশের বেশি হওয়ায় প্রায় সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর এন্ড্রু কুমো।
কোভিড-১৯ মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার পর্যন্ত ৬ লাখ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। পরের দুটি অবস্থানে আছে ব্রাজিল ও ভারত।
দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন চার লাখ ৮৮ হাজার জনের বেশি। আর দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতে মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
২০২০ সালে সংক্রমণ শুরুর পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্তও যুক্তরাষ্ট্রে, সংখ্যাটি প্রায় তিন কোটি ৩৫ লাখ।