মাসুদ আলম।।
কুমিল্লায়
আউশ রোপনে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে চাষিরা। বৃষ্টি এবার কেমন হবে, মৌসুমের
শুরতেই তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন তারা। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের বৃষ্টিতে কোমর
বেঁধে চাষিরা মাঠে ধান রোপার কাজে নেমে পড়েছেন। তাঁদের হাসি মুখ দেখে
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্বস্তিতে কুমিল্লা জেলা কৃষি অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি
অধিদপ্তর জানান, বোরো ধানের আবাদ শেষে আউশ রোপন ও বীজ তলা তৈরীর প্রস্তুতি
নেয় চাষীরা। চলতি মৌসুমে আউশের বীজতলা এবং জমি চাষাবাদের সময় সারাদেশে
প্রছন্ড খরা ও তাপদাহ বয়ে যায়। যার কারণে অনেক চাষি পানি সংকটে পড়ে। কারণ
আউশ চাষাবাদ হয় মূলত বর্ষার পানি দিয়ে। কিন্তু কুমিল্লার চাষিরা পছন্ড
খরতাপ ও অনাবৃষ্টিতে বসে না থেকে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সেচপাম্পের
মাধ্যমে পানি দিয়ে বীজতলা এবং আউশ রোপন শুরু করেছেন। এরপর জুন মাসের প্রথম
সপ্তাহ থেকে জেলায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চাষিদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
যার
কারণ এই বৃষ্টির পানি দিয়ে কুমিল্লা চাষিরা আউশ রোপন, পানির সেচ এবং আমনের
বীজ তলা সম্পূর্ণ করতে পারবেন। তবে আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে সবজি চাষিদের
ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, গত বছরের তুলনায় মৌসুমের শুরুতে
কুমিল্লায় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। গত বছর ৮০ হাজার হেক্টর জমি থাকলেও এই বছর
কুমিল্লা জেলায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা
হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে চাষিরা বৃষ্টি না পাওয়ায় শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা
অর্জন হয়নি। তবে তারপরও আউশ রোপনে প্রায় ৯৩ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।
এটাই স্বস্তিদায়ক মনে হচ্ছে। এদিকে কিছু দিন পরে হলেও হালকা, মাঝারি ও ভারী
বৃষ্টিতে চাষিদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলায় ৭৫
হাজার হেক্টর জমি’র মধ্যে সবচেয়ে বেশি আউশ রোপন হয়েছে কুমিল্লার মুরাদনগর,
দেবিদ্বার, চান্দিনা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট, সদর
দক্ষিণ, আদর্শ সদর ও বরুড়ায়। এছাড়াও লাকসাম ও চৌদ্দগ্রামের কিছু অংশে আউশের
আবাদ হয়েছে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর গ্রামের কৃষক
শানু মিয়া জানান, তিনি ৩৬ শতক জমিতে আউশ ধান লাগিয়েছেন। তার বিশ্বাস, কোন
প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তার জমি থেকে ১৫ মন ধান পাওয়া যাবে। গেল
বছর তিনি একই পরিমাণ ধান পেয়েছিলেন বলে দাবি করে বলেন, আউশ ধানে সার ও
বালাই নাশক ওষুধ কম প্রয়োগ করা লাগে। যার ফলে এই ফসলে খরচ কম হয় এবং ফলন
ভালো হলে কৃষকরা লাভবান হয়।
একই এলাকার কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর
আউশ মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা সেচপাম্পের মাধ্যমে বোরো ধানের মতই আউশ
ধানের আবাদ করছেন। জমিতে পানি সেচের সমস্যা থাকলেও এখন বৃষ্টি পেয়ে
স্বস্তি। তিনি আশা করছেন ফলন ভালো হবে।
বৃষ্টি স্বস্তি দিয়েছে জেলার
সাধারণ মানুষকে। হাসি ফুটিয়েছে সাধারণ চাষিদের মুখেও। বরুড়া উপজেলা আউশ
চাষি আবদুল আউয়াল ও হোসাইন মিয়া বললেন, সামান্য বিঘে দুয়েক জমিতে চাষ করে
কোনও রকমে সংসার চালান। বৃষ্টির পানির অভাবে গত বছর জমিতে ধান চাষ করতে
পারিনি। এ বার ভরা বর্ষা দেখে বীজতলা করেছি। ধানের চারা রোপন করবো।
জেলা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে
ক্ষতি নেই। প্রতিদিনের বৃষ্টিতে কৃষক ও চাষিদের মুখে হাসি ফুটছে। কারণ আউশ
চাষে চাষিরা সেচ সংকটে আছে। এদিকে কুমিল্লার ফসলের মাঠে খুব বেশি সবজি নেই।
শুধু মাত্র কাঁচা শাক-সবজি, পটল, শশা ও ঢেঁড়শ রয়েছে। বৃষ্টিতে এইসব ফসলের
কোন ক্ষতি হবে না।