বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের হামলায় মো. শাহ আলম খান (৬০) নামে এক গরু খামারি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে সারা দেশে নির্বাচনী সহিংসতায় তিনজনের প্রাণ গেল।
গরু খামারি শাহ আলম খান বুধবার রাত ১২টার দিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এর আগে বুধবার বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার বড়দুলালী গ্রামের সীমান্তবর্তী বেইলি ব্রিজ এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহ আলম উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বারপ্রার্থী মন্টু হাওলাদারের ভায়রা ও বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামের ইদ্রিস খান ওরফে ইঙ্গুল খানের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৫টার দিকে বড়দুলালী গ্রামের সাগর সরদার (১৪), আশিব খান (১৪) স্থানীয় হাদিস সরদারের ভ্যানে কমলাপুর ও বড়দুলালী গ্রামের সীমান্তবর্তী বেইলি ব্রিজ এলাকায় যেতে চান।
কম ভাড়া দিতে চাওয়ায় ভ্যানচালক হাদিস সরদার তাদের নিতে চায়নি। এ নিয়ে উভয়ের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সন্ধ্যায় সাগর ও তার মামাতো ভাই অলিব খান ওই বেইলি ব্রিজের কাছে ভ্যানচালক হাদিসকে একা পেয়ে বেদম মারধর করে।
এ সময় সাগরের মামা শাহ আলম খান তার ভাগ্নে সাগর সরদার ও ভাতিজা আশিব খানের বিচার করেন।
এ সময় ওই বেইলি ব্রিজ এলাকার অপর প্রান্তের দোকানের সামনে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ফিরোজ মৃধার কর্মী-সমর্থক জাকির মৃধা, সোবাহান মৃধা, এনায়েত মৃধার নেতৃত্বে ৮-১০ জন ছিলেন।
তারা পরাজিত মেম্বারপ্রার্থী মন্টু হাওলাদারের ভায়রা শাহ আলম খানের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ২-৩ জন হামলাকারী শাহ আলমকে ঘুষি ও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক শাহ আলমকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
সেখানে চিকিৎসাধীন রাত ১২টার দিকে শাহ আলম মারা যান।
গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে বুধবার বিকালে কমলাপুর গ্রামের ভ্যানচালক হাদিস সরদার বড়দুলালী গ্রামের সাগর সরদার, আশিব খানকে চড় মারে। এ নিয়ে বড়দুলালী বেইলি ব্রিজের কাছে ওই দুই কিশোর ভ্যানচালক হাদিসকে পেয়ে মারপিট করে।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর ৩-৪ ব্যক্তি শাহ আলমের ওপর হামলা চালায়। বরিশাল মেবাচিম হাসপালে চিকিৎসাধীন রাত ১২টার দিকে শাহ আলম মারা যান। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, নির্বাচনের দিন উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কমলাপুর গ্রামে ভোটকেন্দ্রে বোমায় নিহত মৌজে আলী মৃধার ছেলে নজরুল ইসলাম মৃধা বাদী হয়ে বিজয়ী প্রার্থী ফিরোজ মৃধা, পরাজিত প্রার্থী মন্টু হাওলাদারসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
সোমবার রাতে থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক ধারায় ওই মামলাটি দায়ের করা হয়। পুলিশ সোমবার রাতেই ৯নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ফিরোজ মৃধা, তার কর্মী ইমন হোসেন, নয়ন মৃধাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ওই তিনজনকে মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালতের বিচারক তাদের বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান।
এর আগে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় আরিফ হোসেন (২০) নামে এক কলেজছাত্র মারা যায়। এ ছাড়া মাদারীপুরের শিবচরে নির্বাচনের দিন সহিংসতায় আহত ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সভাপতি আবু বক্কর ফকির (৪৫) মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।