তানভীর সাবিক, কুবি ||
দ্বিতীয়বারের
মতো মানবাকৃতির রোবট তৈরি করলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী।
রোবটটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ব্লুবেরি’। রোবটটির গায়ের রং নীল (ব্লু) ও
রোবটটিতে র্যাস্পবেরি পাই ব্যবহার করা হয়েছে বিধায় এর নামকরণ করা হয়
ব্লুবেরি। উদ্ভাবকদের দাবি, রোবটটিকে যদি আরেকটু উন্নত করা হয় তাহলে এটি
করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজও করবে।
জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা
একাডেমীর (নেকটার) অর্থায়নে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও
প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আবু মুসা আসআরীর সহযোগিতায়
রোবটটি তৈরি করা হয়েছে। রোবটটি তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান
বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্জিত ম-ল, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন সিস্টেমস
বিভাগের জুয়েল নাথ ও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মিষ্টু পাল।
তরুণ
প্রযুক্তিবিদদের টিম কোয়াণ্টা রোবটিক্স-এর সদস্যরা জানান, প্রায় ১ লক্ষ
টাকা ব্যয়ে এ রোবটটি তৈরি করতে প্রায় সাড়ে তিন মাস সময় লেগেছে। রোবটটিতে
রাসবেরি পাই মাইক্রোপ্রসেসর এবং আর্ডুইনোতে পাইথন, ব্যাশ স্ক্রিপ্টিং এবং
সি প্লাস প্লাস ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়েছে। অতিরিক্ত কোনো ডিভাইসের
সাহায্য ছাড়াই প্রায় যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম এ রোবটটি। এছাড়া এটি
মানুষের মতো বেশকিছু মুভমেন্ট করতে পারে। চাইলেও যে কেউ কথা বলতে পারবে।
প্রশ্ন করলে উত্তর দিবে। আবার বাসায় গ্যাস লিক হলে কিংবা আগুন লাগার সাথে
সাথেই সতর্কবার্তা দিবে।
এছাড়া এ রোবটটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের
রোবট তৈরিতে আকৃষ্ট করবে বলে দাবি করেছেন তারা। কারণ প্রাইমারি স্কুলের
শিক্ষক হিসেবে এবং বাচ্চাদের বিনোদন দিতে ও যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার
মাধ্যমে নতুন কিছু শেখানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে। রোবটটিতে রয়েছে অনেকগুলো
সেন্সর যা বিভিন্ন ধরণের সিগন্যাল দিবে। ব্লুবেরিকে যদি একটু হেলে ধরা হয়
তাহলে সে জাইরো সেন্সরের মাধ্যমে বলে দিবে সে পড়ে যাচ্ছে। এছাড়া রোবটটিকে
আরেকটু উন্নত করলে এটি করোনার স্যাম্পল কালেক্ট করার মত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ
কাজও করবে। প্রতিনিয়তই রোবটটিকে উন্নত করা যাবে।
টিম কোয়াণ্টা
রোবটিক্সের নেতৃত্বে থাকা সঞ্জিত ম-ল বলেন, আসলে সত্যি বলতে অনুভূতিটা অনেক
দারুণ। কারণ নিজের বানানো কোন একটা জিনিস দেখতে খুব ভালো লাগে। ছোটবেলা
থেকেই নতুন কিছু বানাতে ভালো লাগে। আমার শখ ইলেকট্রনিক্স। ছোটবেলা থেকে
অনেক প্রজেক্ট করি ইলেকট্রনিক্স প্রজেক্ট বা বিভিন্ন সাইন্স প্রজেক্ট।
অনেকগুলো কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করেছি। রাতদিন সবকিছু বাদ দিয়ে পরিশ্রম করে
একটা জিনিসকে পূর্ণতা দেওয়ার মধ্যে আনন্দটাই অন্যরকম যা কোনভাবেই ভাষায়
প্রকাশ করার মতো না। সামনে আরও ভাল কিছু করার সুযোগ চাই।
জুয়ের দেবনাথ
বলেন, গতবারের রোবট সিনার চেয়ে এটা অনেক আপডেট। আমাদের কাছে অনেকটা
চ্যালেঞ্জিং ছিল। ব্লুবেরিকে আমরা প্রতিনিয়ত আপডেট করে যেতে পারবো। এটা
করতে দিনরাতের পার্থক্য ভুলেই গিয়েছিলাম। এমনও আছে টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা
কাজ করেছি। কোডের মধ্যে এররের পর এররের সম্মুখীন হতে হতে অনেক ডিপ্রেশনে
চলে গিয়েছি। কোডের কিছু কিছু গোপন এরর ধরতে ৪/৫ ঘণ্টা ল্যাপটপের সামনে বসে
থেকেছি, তাও চেষ্টা করা বন্ধ করিনি। চেষ্টা করবো পরিবর্তিতে আরো ভালো কিছু
করতে।
আবিষ্কারক টিমের আরেক সদস্য মিষ্টু বলেন, এই রোবটটা ছিলো আমার
জন্য প্রথম কোনো প্রজেক্ট। যদিও আমি কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিং এর সাথে আগে
থেকেই জড়িত। কিন্তু এমন কোনো ছোট বা বড় প্রজেক্ট এর আগে করিনি। শুরু থেকেই
অনেক ধরনের সমস্যার (কোডে এরর বা ডিভাইস এ সমস্যা) মুখোমুখি হয়েছি। তবুও
থেমে থাকিনি। ইলেকট্রনিকস এর সাথে কোডিং এর সম্পর্ক যতটা দেখতে সুন্দর
ততটাই কাজ করতে কষ্ট। এই রোবট টা আমাদের আরো উন্নত করার সুযোগ আছে এবং আমরা
সেটা নিয়ে কাজ করে যাবো।
এছাড়া পর্যাপ্ত অনুদান ও উপযুক্ত গবেষণার
পরিবেশ পেলে দেশের জন্য এবং গোটা বিশ্বের জন্য অনেক ভালো কিছু করার ইচ্ছা
আছে বলে জানিয়েছে এ টিমের সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সঞ্জিত ম-ল ও
জুয়েল নাথসহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী মিলে তৈরি করেছিলো
দেশের চতুর্থ মানবাকৃতির রোবট সিনা। মাত্র দুই মাসে প্রায় আটত্রিশ হাজার
টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা নগরীর একটি বাসার ছাদে ঐ রোবটটি তৈরি করা হয়েছিলো।