দুই বছরের ফাইনাল শেষে এক ম্যাচের ফাইনালেই সেরা দলের ফয়সালা মানতেই পারছেন না বিরাট কোহলি। জয়ের কৃতিত্ব নিউ জিল্যান্ডকে দিচ্ছেন ভারতীয় অধিনায়ক, তবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তার চাওয়া তিন ম্যাচের সিরিজ। কেন উইলিয়ামসন অবশ্য পুরোপুরি একমত নন এখানে। নিউ জিল্যান্ড অধিনায়কের মতে, এক ম্যাচের ফাইনালই দারুণ রোমাঞ্চকর। দুটি পুরো দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর সাউথ্যাম্পটনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল দেখেছে জয়-পরাজয়। আবহাওয়ার কথা ভেবেই ঠিক করে রাখা ষষ্ঠ দিনে (রিজার্ভ ডে) ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথম আসরের সেরা হয়েছে নিউ জিল্যান্ড।
শেষ দিন শেষ সেশন শুরুর সময়ও ম্যাচে সম্ভব ছিল যে কোনো ফল। শেষ পর্যন্ত কিউইরা জিতে যায় ৭.১ ওভার বাকি থাকতে।
এই একটি ম্যাচেই ট্রফির ভাগ্য নির্ধারণ নিয়ে ম্যাচ শেষে খেদ জানালেন কোহলি।
“ এক ম্যাচ দিয়েই টেস্টের বিশ্বের সেরা টেস্ট দল বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় আমি একদমই একমত নই। টেস্ট সিরিজ যদি হয়, তিন ম্যাচ জুড়ে দলের চরিত্র ফুটে ওঠে... কোন দলের সামর্থ্য আছে সিরিজে ফিরে আসার বা প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার।”
“ স্রেফ দুটি দিনের চাপের পর হুট করে কোনো দল আর ভালো টেস্ট দল নয়, এটা হতেই পারে না। আমি এটা বিশ্বাসই করি না।”
কোহলিদের কোচ রবি শাস্ত্রি অবশ্য ফাইনালের বেশ আগে থেকেই কয়েকবার বলেছেন, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হওয়া উচিত তিন ম্যাচের। কোহলি নিজেও ম্যাচ শুরুর আগে বলেছেন, এক ম্যাচের জয়-হার তার দলের আগের কয়েক বছরের সাফল্যময় সময়কে প্রভাবিত করবে না।
ম্যাচের পর ভারত অধিনায়ক বলছেন, ফাইনালকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই প্রয়োজন অন্তত তিন ম্যাচের সিরিজ।
“ এই খেলাটাই দেখুন, যেভাবে এগিয়েছে, যতটা সময়ই আমরা পেয়েছি, আপনি কেন চাইবেন না আরও দুটি টেস্টে দুই দলের লড়াই চলুক এবং তার পর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্য বিজয়ী নির্ধারিত হোক! ইতিহাস যদি দেখেন, যতগুলি অসাধারণ টেস্ট সিরিজ হয়েছে, তিন ম্যাচ বা পাঁচ ম্যাচ ধরে তাদের লড়াই লোকে মেনে রেখেছে ও সিরিজগুলি স্মরণীয় হয়ে আছে।”
“ এটি অবশ্যই চালু করা উচিত। এমন নয় যে আমরা জিততে পারিনি বলে এসব বলছি। আমি বলছি টেস্ট ক্রিকেটের স্বার্থেই এবং এই লড়াই অন্তত তিন ম্যাচ ধরে হওয়া উচিত যেন এটি সত্যিকার অর্থেই স্মরণীয় কিছু হয়। তাতে চড়াই-উৎরাই থাকবে, মানসম্পন্ন দুটি দল নিজেদের উজাড় করে ঝাঁপিয়ে পড়বে।”
এক ম্যাচের ফাইনালে হৃদয় ভাঙার অভিজ্ঞতা কম নেই উইলিয়ামসনের। ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা ছিল হেরে যাওয়া দলে। ২০১৯ আসরের ফাইনালে মূল ম্যাচ ও সুপার ওভার টাই হওয়ার পর তারা ট্রফি পায়নি স্রেফ বাউন্ডারি সংখ্যায় পিছিয়ে থাকায়। তার পরও এক ম্যাচের ফাইনালের রোমাঞ্চই তার কাছে বেশি আকর্ষণীয়।
কোহলির মতামত নিয়ে ম্যাচের পর জানতে চাওয়া হলে উইলিয়ামসন দেখালেন মুদ্রার উল্টো পিঠ।
“ এই ফাইনালের (এক ম্যাচের) রোমাঞ্চকর দিক হলো, যে কোনো কিছুই হতে পারে। আমরা ভালো করেই জানি, ক্রিকেট কতটা অস্থির হতে পারে, বিশ্বকাপসহ অন্যান্য অনেক জায়গায় আমরা সেসবের নমুনা দেখেছি। একটি ম্যাচই হলে তা অনন্য এক নাটকীয়তা তৈরি করে, যা খুবই উত্তেজনাময়। যে কোনো দিন যে কোনো কিছু হতে পারে।”
ফাইনালের আগে আইসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী জেফ অ্যালারডাইস বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঠাসা সূচিতে ফাইনালে তিন ম্যাচের সিরিজ করা কঠিন। উইলিয়ামসনও এই যুক্তিতে একমত।
“ দুই দিকেই যুক্তি আছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই সূচি। এমনিতেই যত ক্রিকেট খেলা হয় এখন, এসবের মধ্যে আরেকটি সিরিজ করা কঠিন।”
“অবশ্যই এতে কোনো কোনো সন্দেহ নেই যে, কোনো সিরিজে যত বেশি ম্যাচ হয়, ততই তা উন্মুক্ত হয় ও অনেক কিছু ফুটে ওঠে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাই বলতে হবে, এই ম্যাচ খুব রোমাঞ্চকর ছিল। প্রথমবারের মতো এরকমের একটি প্রতিযোগিতা হয়েছে, দুই দলই লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং দারুণ খেলা হয়েছে।”