দৈনিক শনাক্ত ফের ৬ হাজারে, মৃত্যু ৮১ জনের
Published : Friday, 25 June, 2021 at 12:00 AM
নতুন
করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের ছয় হাজার
ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যুর সংখ্যাও রয়েছে আশির উপরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৬ হাজার ৫৮ জনের
মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের।
এক দিনে
শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সংক্রমণের
দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১২ এপ্রিল এক দিনে ৭ হাজার ২০১ জন নতুন রোগী
শনাক্তের খবর এসেছিল।
গত এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমলেও নতুন
রোগী বেড়েছে সোয়া তিনশর বেশি। বুধবার দেশে ৫ হাজার ৭২৭ জনের শরীরে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মৃত্যু
হয়েছিল ৮৫ জনের।
শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ১৫৭২ জনই ঢাকা জেলার।
আর খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে। নমুনা
পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত
শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ জনে। তাদের মধ্যে ১৩
হাজার ৮৬৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।
সরকারি হিসাবে একদিনে আরও ৩ হাজার ২৩০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৩ জন।
সংক্রমণের
দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সরকার এপ্রিলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর মে মাসে
দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে এসেছিল। কিন্তু
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি
ট্রান্সমিশন ঘটায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু জুনের শুরু থেকে
আবার বাড়ছে।
ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৫৭২ জন কোভিড-১৯
রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে ৪৮৩ জন, রাজশাহী জেলায় ৩১৪ জন, খুলনা
জেলায় ২৬০ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ২৪৭ জন, নওগাঁয় ২২১ জন, যশোরে ১৯১ জন,
ঠাকুরগাঁওয়ে ১৮৮, টাঙ্গাইলে ১৪৯ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩৯ জন, নোয়াখালীতে ১১৮ জন
এবং ফরিদপুরে ১২২ জনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
বিভাগওয়ারী
হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের ২৬৯৫ জন থেকে কমে ২২৭১ জন
হয়েছে, যা সারা দেশের মোট শনাক্তের ৩৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে
নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের জন ৬৭৭ থেকে কমে ৬১১ জন হয়েছে।
তবে রাজশাহী বিভাগে ৮৪৭ জন থেকে বেড়ে ১০১৮ জন এবং খুলনা বিভাগে ৯০৩ জন থেকে বেড়ে ৯১৭ জন হয়েছে নতুন রোগীর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৪টি ল্যাবে ৩০ হাজার ৩৯১টি
নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬টি
নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা আগের দিন ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল।
দেশে
এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার
হার ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে
পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আগের দিনের ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ থেকে কমে ১৫
দশমিক ৩৪ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ১৯ দশমিক ০৩
শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৩৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ থেকে কমে ৩৮ দশমিক ১১ শতাংশ এবং
রাজশাহী বিভাগে ১৮ শতাংশ থেকে কমে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের
হার।
তবে রংপুর বিভাগে দেনিক শনাক্তের হার আগের দিনের ৩৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২৩ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া
চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, রংপুর বিভাগে ৭ জন এবং
ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।
মৃতদের মধ্যে ৫৫ জন পুরুষ এবং ২৬ জন নারী। তাদের ৬২ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। বাসায় মারা গেছেন ৫ জন।
তাদের
৩৬ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ১৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের
মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের
মধ্যে, ৮ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের
মধ্যে ছিল।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮
মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে যায় গত ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭
এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী
শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯
এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৯৬ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ লাখ ৯২ হাজারের বেশি মানুষের।