সারাদেশে বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউনের কারণে মহাসড়কে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি অভিমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। রবিরার (২৭ জুন) সকাল থেকেই মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে দু-তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল মোড়, কাঁচপুর, মদনপুরে মানুষের ঢল। কেউ পায়ে হেঁটে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে, আবার কেউ বড় বড় লাগেজ বা ব্যাগ নিয়ে ছুটছেন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে ছোট ছোট বিকল্প পরিবহন ও ট্রাকে করে যে যেভাবে পারছেন রওনা হচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে ফিরছেন পেশায় বিদ্যুৎমিস্ত্রি সানোয়ার হাসান। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে কামকাজ বন্ধ থাকবে। রোজগার থাকবে না, তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি।’
সহিরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি যাচ্ছেন ফেনীতে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে শহরে দোকানপাট বন্ধ থাকবে। দোকান খুলতে পারবো না। কাজ না থাকলে টাকা কোথায় পাবো? খাবো কী? এর চেয়ে ভালো, যেভাবেই হোক দেশের বাড়িতে গিয়ে লতাপাতা খেয়ে হলেও বেঁচে থাকতে পারবো। নদীতে মাছ ধরতে পারবো। সেখানে সবজির দামও কম।’
একই কথা বলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের উদ্দেশে রওনা দেওয়া কবির মিয়া। তিনি বলেন, ‘কালাপাহাড়িয়া যাচ্ছি। সেখানে ক্ষেত আছে। পুকুর আছে। কোনও রকম চাল কিনে খেয়ে বেঁচে থাকবো। এখানে শহরে লকডাউনে আরও বেড়ে যাবে জিনিসপত্রের দাম।’
রবিবার দুপুরে সাইবোর্ড এলাকায় দেখা যায়, পিকআপ ভ্যানে করে মানুষ গাদাগাদি করে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। মোবাইল কোর্ট বা পুলিশি ঝামেলা এড়াতে প্রাইভেটকার ভাড়া করে রওনা দেওয়া অনেক যাত্রীর হাতেই আছে ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র। অনেক পরিবারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিশুসহ বাড়িতে যেতে দেখা গেছে। বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের ট্রাকেও যাচ্ছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, সকাল থেকেই মহাসড়কে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। লকডাউনের কথা শুনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিকল্প পরিবহনে করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চারটি চেকপোস্ট বসিয়েছি। যাতে গণপরিবহন নারায়ণগঞ্জ অংশে প্রবেশ করতে না পারে। করোনার এই মহামারিতে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, তারা যেন ঘর থেকে বের না হয়ে নিজ নিজ বাসায় থাকেন। কিন্তু তা না শুনে তারা অসচেতনভাবে যেভাবে পারছেন বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।’