কোনোভাবেই
করোনা মহামারির লাগাম টানা যাচ্ছে না। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছয় হাজার
ছাড়িয়েছে। পরীা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ২২ শতাংশ। দ্রুত নিয়ন্ত্রণ
করা না গেলে শিগগিরই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞরা অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।
কিন্তু মানুষের জীবন-জীবিকাসহ আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার এখনই
শাটডাউনে যেতে চাচ্ছে না। এর বদলে আজ থেকে সীমিত আকারে এবং ১ থেকে ৭ জুলাই
পর্যন্ত কড়াকড়ি লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। তাতে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত
পরিবহনের চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এদিকে কঠোর লকডাউনের আভাস পেয়ে দলে দলে
মানুষ যে যেভাবে পারছে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ মানুষ ন্যূনতম
স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে
দেশের করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
ঢাকার আশপাশের
সাতটি জেলাসহ দেশের অনেক জেলায় আগে থেকেই লকডাউন চলছে। এখন রাজধানীসহ সারা
দেশে লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আজ থেকে সারা
দেশে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। দোকানপাট-শপিং মল সীমিত পরিসরে চালু রাখা হতে
পারে। আর অর্থবছরের কার্যক্রম শেষ হলে বৃহস্পতিবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন
শুরু হবে। তখন রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খোলা থাকলেও শ্রমিকদের হেঁটে
কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করতে হবে। কারখানার মালিক বা শীর্ষস্থানীয়
কর্মকর্তাদেরও কারখানায় থেকে কাজ করতে হবে। কেউ গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারবে
না। সরকারি কর্মচারীরাও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হতে পারবেন না। শুধু
জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন।
অর্থবছরের শেষ মাস হিসেবে জুন কোজিং বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক কার্যাবলির সঙ্গে
জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা
হবে। অন্যদিকে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা থাকার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ
ব্যাংক এ বিষয়ে আলাদা নির্দেশনা দেবে। লকডাউন কার্যক্রম কঠোরভাবে
বাস্তবায়নের জন্য মাঠে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা থাকবেন।
প্রয়োজনে সেনা সদস্যদেরও মাঠে নামানোর প্রস্তুতি রাখা হবে। অনেক বিশেষজ্ঞই
মনে করছেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য লকডাউন কিংবা চলাচল নিয়ন্ত্রণের
পাশাপাশি বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। টিকা নিয়ে তৈরি হওয়া
সাময়িক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে দেশের
প্রত্যেক নাগরিকের টিকা নিশ্চিত করা হবে। এই ল্েয টিকা আমদানির পাশাপাশি
দেশে টিকা তৈরির প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,
জুলাই মাসের মধ্যে আরো ৫০ লাখ টিকা দেশে চলে আসবে।
করোনায় সারা পৃথিবী
ভুগছে। টিকার সংকট সর্বত্র। এ অবস্থায়ও বাংলাদেশ টিকা প্রদানে যেমন এগিয়ে
আছে, তেমনি মহামারিও যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। আমরা আশা করি, আগামী
দিনগুলোতেও বাংলাদেশ মহামারি নিয়ন্ত্রণে সফল হবে।