
করোনা
মহামারি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে,
যা করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কখনো দেখা যায়নি। আক্রান্তের
সংখ্যাও আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজারের বেশি রোগী
শনাক্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান করা কঠিন হয়ে উঠেছে।
বেশির ভাগ হাসপাতালে ধারণমতার চেয়ে বেশি রোগী রাখা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে
চিকিৎসক-নার্সসহ জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। আগে সংক্রমণ মূলত শহরে থাকলেও এখন
তা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে আনার পথেই অনেক রোগীর মৃত্যু
হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যেভাবে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের হার বাড়ছে,
এভাবে বাড়তে থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যেই চিকিৎসা সংকট মারাত্মক রূপ নেবে।
বিনা চিকিৎসায় বহু মানুষের মৃত্যু হবে। তার পরও মানুষের মধ্যে সচেতনতার যে
অভাব দেখা যাচ্ছে, তা রীতিমতো দুঃখজনক। কঠোর লকডাউন দিয়েও মানুষের চলাচল
নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছে না। এমনকি অনেকে মাস্কও
পরছে না। অযথা ঘোরাঘুরি করছে। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে
দাঁড়াবে, তা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।
ঢাকার বাইরে অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে
পড়েছে যে বাইরের প্রচুর রোগী এখন ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ডিএনসিসি
হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, সেখানে ভর্তি রোগীর ৭০ শতাংশই বিভিন্ন জেলা
থেকে এসেছেন। তাঁর মতে, এভাবে রোগী এলে সাত দিন পর হাসপাতালে ঠাঁই হবে না।
কিছু হাসপাতালে বেড বাড়ানোর, নতুন করে কিছু হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু
করার এবং আলাদা হাসপাতাল তৈরিরও প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে
প্রশিতি জনবলের। আর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংক্রমণের গতি নিয়ন্ত্রণ না করা
গেলে এভাবে শয্যাসংখ্যা বাড়িয়েও লাভ হবে না। কিন্তু যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি
না মানার প্রতিযোগিতা চলছে, সেখানে সংক্রমণের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে
কিভাবে? আর দেশে রোগী তো শুধু করোনার নয়, আরো অনেক রোগে আক্রান্ত রোগী
রয়েছে এবং তাদেরও চিকিৎসা দিতে হবে। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর
সংক্রমণ। এ পর্যন্ত ১৩১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ১২৮ জনই ঢাকার।
কয়েকটি জেলায় দেখা দিয়েছে কালাজ্বরের প্রকোপ। সব হাসপাতাল করোনা মহামারির
সুবিধা নিয়ে নিলে অন্য রোগীরা চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে?
সামনে আসছে
কোরবানির ঈদ। মানুষের চলাচল, মেলামেশা তখন আরো বেড়ে যাবে। আর রাতারাতি
মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতনও করা যাবে না। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রুততম
সময়ে ব্যাপক মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে পারাটাই হবে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়। মাঝখানে টিকা সংকট হলেও এখন টিকার পর্যাপ্ত মজুদ
আছে। কিন্তু গণটিকাদান কর্মসূচিতে গতি নেই। নিবন্ধন শুরু হলেও প্রথম দিনই
নিবন্ধন করতে গিয়ে সংকটে পড়েছে মানুষ। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে এমন
অব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।