ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
১৭ মাস পর টেস্ট জয় বাংলাদেশের
Published : Sunday, 11 July, 2021 at 7:07 PM
১৭ মাস পর টেস্ট জয় বাংলাদেশের২০২০ সালের ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুলাই। মহাকালের ক্যালেন্ডারের পাতায় ঝরে পড়েছে কতগুলো মাস। কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট ভাগ্য বদলায়নি। দীর্ঘ ১৭ মাসে একবারের জন্যও লাল বলের ক্রিকেটে জয়ের স্বাদ পায়নি মুমিনুলরা। অবশেষে খুললো ব্যর্থতার গেরো। যাদের বিপক্ষে এসেছিল সবশেষ জয়, সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ।

হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ২৫৬ রানে। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর সিরিজ জয়ের আনন্দও সঙ্গী হয়েছে মুমিনুলদের।

টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কম সমালোচনা শুনতে হয় না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে, বিশেষ করে ওয়ানডেতে দুর্দান্ত এক দল হলেও লাল বলের ক্রিকেটে সেই তারাই অন্য রূপের! দীর্ঘ দিন জয়হীন থাকা টেস্টে এবার স্বস্তির হওয়া বইছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি জয়ের পর বাংলাদেশ খেলেছে ৪ টেস্ট। যেখানে তিনটিতে হার ও এক ম্যাচে আছে ড্র। যার মধ্যে রয়েছে আবার দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জাও! পারফরম্যান্সের গ্রাফ তলানিতে ঠেকা দলটি জিম্বাবুয়ের সফরে গিয়ে পেলো সাফল্য।

আর এই সফল্যের পথের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ। ঘূর্ণি জাদুতে কুপোকাত করেছেন স্বাগতিকদের। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া এই স্পিনারের দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার ৪ উইকেট। পঞ্চম দিনের লাঞ্চের আগে জোড়া আঘাতের পর শেষ উইকেটটিও তার। মিরাজের মতো লাঞ্চের আগে জোড়া আঘাত হেনেছিলেন তাসকিন আহমেদও। বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন রীতিমতো। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রানে তার শিকারও ৪ উইকেট।

পঞ্চম দিনের প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের বোলাররা সুবিধা করতে না পারলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে আলো ছড়িয়েছেন তারা। সাফল্য এসেছে জোড়ায় জোড়ায়! প্র্রথমে মিরাজ হানলেন জোড়া আঘাত। তাসকিনই বা কম কীসে! এই পেসারও জোড়া আঘাত বসালেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপে। ফলে ৩ ওভারের মধ্যে জিম্বাবুয়ের নেই ৪ উইকেট। ৩ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় শুরু করা জিম্বাবুয়ের দেখতে দেখতে নেই ৭ উইকেট!

তারপরও খেলার দৈর্ঘ্য বড় হয়েছে লেজের ব্যাটসম্যানরা প্রতিরোধ গড়ায়। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ রান ব্রেন্ডন টেলরের, ৯২। ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেছেন ডোনাল্ড তিরিপানো। ১৪৪ বলে করেন ৫২ রান। এছাড়া শেষ দিকে ব্লেসিং ‍মুজারাবানি ৩০ ও রিচার্ড এনগারাভার করেন ১০ রান।

শেষ দিনের শুরুতে উইকেট নিতে কিছুটা অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে মিরাজ-জাদুতে ভাঙে জিম্বাবুয়ের প্রতিরোধ। ডানহাতি স্পিনার ডিয়োন মায়ার্সকে ফিরিয়ে এনে দেন দিনের প্রথম সাফল্য। পানি পানের বিরতির পর প্রথম বলেই সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ বানান মায়ার্সকে। ফেরার আগে জিম্বাবুইয়েন ব্যাটম্যান ৮৮ বলে করেন ২৬ রান।

এখানেই থামেননি মিরাজ। দুই বল পর আবারও মাতেন উইকেট উদযাপনে। ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটসম্যান টিমাইসেন মারুমাকে এলবিডাব্লিউ করে খালি হাতে ফেরান প্যাভিলিয়নে।

দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা জিম্বাবুয়ে আরও বিপদে পড়ে তাসিকনের ছোবলে। এই পেসারের বলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান রয় কাইয়া। তাসকিন-ম্যাজিক চলতেই থাকে। ক্রিজে ঠিকঠাক দাঁড়ানোর আগে রেগিস চাকাভাকে (১) বোল্ড করে ফেরালে হার দেখতে থাকে জিম্বাবুয়ে।

লাঞ্চ থেকে ঘুরে এসেও চলেছে তাসকিনের তোপ। চতুর্থ উইকেট নামের পাশে যোগ করেন ভিক্তর নিয়াউচিকে ফিরিয়ে। সাকিব আল হাসানের হাতে ধরা পড়ার আগে ঠাণ্ডা মাথায় টিকে থাকায় লড়াই করা জিম্বাবুইয়েন ব্যাটসম্যান ৫৪ বলে করেন ১০ রান।

পরে ইবাদত হোসেনের উইকেট উদযাপনের পর মিরাজ শেষটা মুড়ে দিলে জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ। এই জয়ের পথে নিঃসন্দেহে ‍মিরাজের অবদান অনেক। তবে ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিনের ইনিংস বিশেষ জায়গায় থাকবে। বোলার হয়েও তাসকিন খেলেন ৭৫ রানের ইনিংস। আর মাহমুদউল্লাহ? ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৫০ রানের ইনিংসে বুঝিয়ে দেন তিনি টেস্ট খেলতে জানেন!

যদিও নিজেকে প্রমাণের পর আর লাল বলের ক্রিকেটকে ‘দরকার’ মনে করছেন না তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সকালে খেলা শুরুর আগে গার্ড অব অনার দিয়েছেন সতীর্থরা। আর দিন শেষে উপহার দিলেন জয়। যাতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে হাসলো গোটা বাংলাদেশ!