মুরাদনগরে ক্যাসিনোর আদলে অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী আটক
Published : Tuesday, 13 July, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব
প্রতিবেদক: বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে খেলাধূলাকে কেন্দ্র করে
অনলাইন জুয়া যুবক ও তরুণদের মাঝে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জুয়ার
পরিমাণ লীগ পর্যায়ে খেলাগুলোতে কম হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরকে সামনে
রেখে তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। র্যাবের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী চলমান
কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশে এই অনলাইন জুয়ার পরিমাণ
ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই র্যাব এই অনলাইন জুয়া চক্রসমূহকে গ্রেফতার
করার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা। এরই সূত্র ধরে র্যাব-১১ এর
সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল ১১ জুলাই গভীর রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর থানার
বাবুটিপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে এই চক্রের অন্যতম
সদস্য বাবুটিপাড়া গ্রামের আশকর সর্দারের ছেলে শরীফ শাহজালাল ওরফে মিরাজের
বাড়িতে তল্লাশী করে অনলাইন জুয়া পরিচালনায় ব্যবহৃত ২টি মোবাইল, নগদ ৪৩
হাজার ৮ শ টাকা ও ৩টি চেকবই উদ্ধার করে। এসময় মিরাজকে বাসায় না পেলেও তার
স্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে এই অনলাইন জুয়া চক্রের অন্যতম সদস্য একই গ্রামের
মোঃ শহিদুল্লাহ’র ছেলে মোঃ মিল্লাত হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে
র্যাব-১১ এর সিপিসি-২ এর আভিযানিক দল মোঃ মিল্লাত হোসেনকে আটক করতে সক্ষম
হয়। এসময়ে তার কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। যার মাধ্যমে সে
অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ মিল্লাতের
দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই চক্রের অপর একজন সদস্য একই গ্রামের কামাল হোসেন যে
বর্তমানে র্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে
অনলাইন জুয়া পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত আরো ০৩টি মোবাইল ফোন, নগদ ৯৫,০০০ টাকা ও
১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের অভিযানে অনলাইনে জুয়া পরিচালনার
মাধ্যমে অর্জিত সর্বমোট ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা, ১১টি মোবাইল ফোন, ১৪ টি
সীমকার্ড, ১টি ল্যাপটপ ও ৩টি চেকবই উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ১১টি মোবাইলের
মধ্যে ৮টি মোবাইল অন করা সম্ভব হয়েছে। উক্ত মোবাইল সমূহের বিকাশ, নগদ, ডাচ
বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে ১১ জুলাই পর্যন্ত ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৮
টাকা ব্যালেন্সের ম্যাসেজপাওয়া যায় বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব-১১
কুমিল্লার উপ পরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, এই চক্রটি মূলত
“বাজী লাইভ” নামে মালয়েশিয়ান ওয়েব সাইট ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া পরিচালনা
করে আসছে। এই ওয়েব সাইটটি মূলত মালয়েশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এর একজন করে এজেন্ট নিয়োগ করা আছে। গ্রেফতারকৃত
আসামী মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার মূল
এজেন্ট মুরাদনগর থানার বাবুটিপাড়া গ্রামের সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫)।
সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫) মূলত শরীফ শাহজালাল ওরফে মিরাজ (২৫), মোঃ মিল্লাত
হোসেন (২৮) ও কামাল হোসেন এর মাধ্যমে ১৯টি গ্রুপ তৈরী করে এই অনলাইন জুয়া
পরিচালনা করে আসছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ এ
ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং এর ডিলাররা প্রতিটি গ্রুপের এজেন্ট হতে পারে।
তিনি
আরো জানান, এই জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত অর্থসমূহ সারোয়ার আহমেদ
জুয়েল (৩৫) বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বৈধ পন্থা অনুসরণ না করে ক্রিপ্টো
কারেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে পাচার করে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের বাহিরে
বাংলাদেশের টাকা প্রচুর পরিমাণে পাচার হচ্ছে। পাচারকৃত টাকার পরিমাণের উপর
এই চক্রের মূল হোতা সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫) নির্ধারিত হারে কমিশন পায় এবং
শরীফ শাহজালাল ওরফে মিরাজ (২৫), মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) ও কামাল হোসেন কেও
কমিশন দেয়। এই চক্রটি দরিদ্র তরুণ/যুবকদেরকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক লাভের লোভ
দেখিয়ে অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত করছে। এতে করে বিষয়টি সামাজিক অবক্ষয়ের
দিকে ধাবিত হচ্ছে।
মেজর সাকিব জানান, এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত ও পলাতক
আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ
প্রক্রিয়াধীন এবং ক্যাসিনো ও জুয়ার মতো সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাবের
অভিযান অব্যাহত থাকবে।