কুমিল্লার
দেবীদ্বারে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর ফলে ওই নারী এক
সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকেরে পিতৃপরিচয়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘোরেন
ভুক্তভোগীর পরিবার। তবে কেউ ন্যায় বিচায় দেয়নি। একপর্যায়ে বিষয়টি র্যাবকে
জানায় ভুক্তভোগী পরিবার। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে
অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
গতকাল শনিবার ওই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে
র্যাব-১১ এর কুমিল্লা কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়। পরে র্যাব-১১ এর
সিপিসি-২, কুমিল্লার একটি আভিযানিক দল শনিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে
দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের অভিযুক্ত কাজী মো. সোহাগ মিয়াকে (২৫)
গ্রেপ্তার করে।
কাজী সোহাগ ওই গ্রামের কাজী মো. মফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় একজন চা বিক্রেতা।
রবিবার সকালে কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কম্পানি কমান্ডার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
প্রেস
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত সোহাগ গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে
৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওই নারীকে একাধিকবার
ধর্ষণ করে। এর ফলে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ১০ জুলাই ওই নারী
পুত্রসন্তান জন্ম দেন।
গ্রেপ্তারকৃত সোহাগকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের বিষয়টি সে স্বীকার করে। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ভিক্টিম
গর্ভবতী হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, সোহাগ তাকে
বিভিন্ন সময়ে বারেরা কাজীবাড়ির একটি ভবনের ছাদের উপর নিয়ে ধর্ষণ করে।
প্রতিবন্ধি নারী তার হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করলেও সে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
পরবর্তীতে
পরিবারের সদস্যরা উক্ত বিষয়ে সোহাগ এবং সোহাগের পরিবারের সাথে যোগাযোগ
করলে বিষয়টি আমলে না নিয়ে তাকে ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করে। তাদের ভয়ভীতি ও
হুমকী ধমকী এবং সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে কারো কাছে প্রকাশ এবং আইনের আশ্রয়
নেয়নি।
এক পর্যায়ে গত ১০ জুলাই পুত্র সন্তান প্রসব করার পর ভিক্টিমের
পরিবার ২৪ জুলাই র্যাব-১১’র সিপিসি-২ কুমিল্লার বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের
করার পর অভিযান চালিয়ে সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত সোহাগকে
প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে বুদ্ধিপ্রতিন্ধি ওই নারীকে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ
এবং তার ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হওয়া এবং সন্তান প্রসবের বিষয়টি সে স্বীকার
করে। উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে দেবীদ্বার থানায় আইনানুগ
ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। (মামলা নাম্বার- ২১, তারিখ- ২৫/০৭/২০২১ইং)।
স্থানীয়রা
জানান, নির্যাতিতার পরিবারটি খুবই দরিদ্র। তার বাবা দিনমজুর ছিলেন, প্রায়
দেড় মাস পূর্বে মেয়ের এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা শোনে হৃদক্রিয়া যন্ত্র বন্ধ হয়ে
মারা যান। মা’ও অনেকটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, গত কিছুদিন পূর্বে মা’
পার্শ^বর্তী বাড়িতে কাজ করতে যেয়ে বাম হাত ভেঙ্গে যায়। অর্থাভাবে চিকিৎসা
করতে পারছেনা। এক মাত্র ভাই চট্রগ্রামে একটি প্লাষ্টিক কোম্পানীতে চাকরি
করেন। প্রায় ৪ বছর পূর্বে একই গ্রামের প্রতিবেশী এক যুবকের সাথে বিয়ে হয়
ভিক্টিমের। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারনে ৬ মাসও টেকিনি ওই সংসার। তার পর
থেকেই তার পিতার বোঝা হয়ে পিত্রালয়ে আশ্রিত থেকে মানুষের বাড়িতে
ঝি-চাকরানীর কজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
স্থানীয় পৌর কমিশনার এম,এ
আউয়াল বলেন, গত ১০জুলাই (শনিবার) ভোররাতে মেয়েটির পৈত্রিক নিবাসে একটি
পুত্র সন্তন ভূমিষ্ট হয়। ঘটনার পর থেকে ওই প্রসূতী বারেরা গ্রামের
প্রতিবেশী কাজী মোঃ মফিজুল ইসলামের ছেলে কাজী সোহাগ (২৫)’র নামই বলে আসছেন।
আমরা স্থানীয়ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেছি, সোহাগ তার দায়ভার নিতে চায়না।
আইনগত ব্যবস্থা ছাড়া এবং ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া তার সমাধান হবেনা। মেয়েটি তার
নবাগত সন্তানের পিতা হিসেবে যাকে সনাক্ত করেছে, সে সত্যপ্রকাশে মেয়েটির
দায়ভার নিলে আমরা এলাকাবাসীর সহযোগীতায় তাদের থাকার জন্য আলাদা একটি
নির্দিষ্ট পরিমান জায়গায় আবাসাসন নির্মাণ করে দেয়ার প্রস্তাবও দিয়োছি।