করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত গোটা দেশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার গত ২৩ জুলাই থেকে দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে দ্বিতীয় ধাপে ৬ আগস্ট থেকে আরও পাঁচদিন বর্ধিত করে। টানা ১৯ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ ক্রমশই শিথিল হয়ে আসছে।
সারা দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ চলমান অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে যান চলাচল। স্বাভাবিক সময়ের মতো খুলছে দোকান-পাট। ‘কঠোর লকডাউন’ বাস্তবানে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা না থাকায় স্বাভাবিক নিয়মে চলছে মানুষের যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে যেন ‘কঠোর লকডাউন’ ভেঙ্গে পড়ছে।
সরেজমিনে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাট-বাজার, শপিং মলের কোথায় এক সাঁটার আবার কোথাও পুরো দোকান খুলেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। বেলা ৩টা পর্যন্ত মুদি ও কাঁচাবাজার চলার কথা থাকলেও তা চলছে স্বাভাবিক নিয়মে রাত অবধি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা, মাধাইয়া, নিমসার ও ময়নামতি সেনা নিবাস এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের হরদমে চলছে সকল যাত্রীপরিবহন। মাঝে মধ্যে চলছে যাত্রীবাহী বাসও। কয়েকটি স্থানে পুলিশের চেক পোষ্ট থাকলেও তা উপেক্ষা করেই চলছে ওইসব যানবাহন।
গত ২৩ জুলাই থেকে এক সপ্তাহ ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশের তৎপরতায় চান্দিনা উপজেলাসহ মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে বেশ কঠোর ভাবেই পালিত হচ্ছিল লকডাউন। দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে প্রশাসনের সাথে ‘চোর পুলিশ’ খেলায় মত্ত হয়ে উঠে ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকরা। দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে প্রশাসনের নজরদারী কমতে থাকায় স্বচল হতে শুরু করে হাট-বাজার, দোকান-পাট, সড়ক-মহাসড়ক। আর দ্বিতীয় ধাপের বর্ধিত দিনের প্রথম দিন শুক্রবার (৬ আগস্ট) ‘লকডাউন’ এর তেমন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। মহাসড়কে যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, মারুতি, মিনিবাস এর সাথে মাঝে মধ্যে চলছে যাত্রীবাহী বাস।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে চান্দিনা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান- প্রথম এক সপ্তাহ দিনে কয়েকবার মোবাইল কোট এসেছিল। এখন দিনে ২/১ বার আসে। তখন বন্ধ রাখি। চলে গেলে আবার খুলি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- গত ২৩ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সাত দিনে চান্দিনা উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৭৪টি মামলায় ৪৬ হাজার ৪৫০টাকা জরিমানা করে। ৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ২০টি মামলায় ১২ হাজার ৪১৫ টাকা জরিমানা করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে লকডাউন বর্ধিত করার প্রথমদিন শুক্রবার ভ্রাম্যমান আদালতের টহল থাকলেও কোন মামলা বা জরিমানা করাও হয়নি।
এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার জানান- আমরা একের পর এক জরিমানা করে যাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইন-চার্জ (ইন্সপেক্টর) জিয়াউল হক চৌধুরী জানান- মহাসড়কের যান চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ রোগী, বিদেশগামী, টিকা গ্রহণসহ বিভিন্ন অযুহাতে বের হচ্ছেন। দ্রুতগামী গাড়িগুলো চেক পোস্টের সিগনালও মানতে রাজি না। তারপরও আমরা যেটুকু পারছি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
ময়নামতি ক্রসিং থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান জানান- আমাদের থানার সামনে চেক পোস্ট আছে। বাস, মাইক্রোবাস আটক করে মামলা দিচ্ছি।