দেশে করোনা মহামারির
দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় কয়েক দিনের বিরতিসহ গত এপ্রিল থেকে দেশে কঠোর
বিধি-নিষেধ বা লকডাউন চলে আসছিল। সরকারি-বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি
শিল্প-কারখানাও বন্ধ করা হয়েছিল। বন্ধ ছিল বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ সব ধরনের
গণপরিবহন। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও ছিল নিষেধাজ্ঞা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের
অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। নি¤œ আয়ের বহু মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে
ওঠে। ফলে মানুষ ক্রমেই লকডাউনের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। এই অবস্থায়
সরকার লকডাউন তুলে নিয়েছে। গতকাল থেকে পর্যটন, বিনোদনকেন্দ্র ও
শিাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সব কিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে
মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি পালনের ওপর। একই সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচি দ্রুত
এগিয়ে নেওয়ার ল্েয ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এটা ঠিক, দীর্ঘ সময়
ধরে লকডাউন চালিয়ে যাওয়াও কোনো প্রকৃত সমাধান নয়। নানা বাস্তব কারণেই মানুষ
অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। লকডাউনের শেষ দিকে জরিমানা করেও মানুষকে ঘরে আটকে রাখা
যাচ্ছিল না। আবার এটাও সত্য যে সংক্রমণের দ্রুত বিস্তার রোধে সাময়িক
লকডাউনের বিকল্পও নেই। অনেক দেশই লকডাউন তুলে নিয়ে প্রায় স্বাভাবিক জীবনে
ফিরে এসেছে। তারা তা করতে পেরেছে এই কারণে যে তাদের কাছে টিকার পর্যাপ্ত
সরবরাহ ছিল এবং দেশের বেশির ভাগ মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে
পেরেছিল। আমরা তা করতে পারিনি। কারণ টিকার বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছিল।
টিকার সংকট কিছুটা কাটলেও এখন পর্যন্ত সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। সরবরাহ পর্যাপ্ত
করার ল্েয নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই বেশির
ভাগ মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,
লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও সরকারকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
সংক্রমণের লাগাম টানার নানা রকম উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর
মধ্যে আছে অফিস, কলকারখানা, মার্কেট, হাট-বাজার, গণপরিবহন সর্বত্র সঠিকভাবে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ জন্য কঠোর নজরদারি থাকতে
হবে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে
কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নিয়ম অরে অরে পালন করতে
হবে। করোনা রোগীরা নিজের অজান্তেই যেন সংক্রমণ না ঘটায় সে জন্য করোনা
টেস্টের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। যারা পজিটিভ হবে, তাদের চিকিৎসার আওতায়
নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনের জন্যও আইসোলেশনের ব্যবস্থা
করতে হবে। একই সঙ্গে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, কঠোর
বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েই সরকার লকডাউন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি
খারাপের দিকে গেলে আবারও লকডাউন দিতে হতে পারে। সে অবস্থা যাতে না হয় সে
জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।