ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ইসলামের নির্দেশনা
Published : Friday, 13 August, 2021 at 12:00 AM
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ ।।
মাদকের ভয়ংকর থাবায় আজ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন মানবসভ্যতা। এর সর্বনাশা মরণ ছোবলে জাতি ধ্বংস হচ্ছে। ভেঙে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। বিঘিœত হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। ব্যাহত হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বৃদ্ধি পাচ্ছে চোরাচালানসহ মানবতাবিধ্বংসী অসংখ্য অপরাধ। মাদকাসক্তির কারণে সব জনপদে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বেড়ে গিয়ে মানুষের জান-মাল ও নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। সমাজের বেশির ভাগ অপরাধের জন্য মুখ্যভাবে দায়ী এই মাদকতা। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মদ পান কোরো না। কেননা তা সব অপকর্মের চাবিকাঠি।’ (ইবনে মাজাহ : হাদিস : ৩৩৭১)
মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করতে চাইলে অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করতে হবে। যেসব বস্তু সেবনে উম্মত্ততা সৃষ্টি হয় অথবা বোধশক্তির ওপর তিকর প্রভাব বিস্তার করে, সেগুলো মাদকদ্রব্য। ইসলাম সব ধরনের নেশাদার দ্রব্য হারাম করেছে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্যই মদ, আর যাবতীয় মদ হারাম।’ (মুসলিম ও মেশকাত, হাদিস : ৩৬৩৮)
জাহেলি যুগে আরবরা মদ্য পানের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে। তাদের মাদকতার আসক্তির কোনো সীমা ছিল না। তাদের ভাষায় মদের প্রায় ১০০টি নাম রাখা হয়েছিল। তাদের কাব্য ও কবিতায় মদের বিভিন্ন প্রকারের উল্লেখ আছে। ইসলাম তাদের সুনির্দিষ্ট ও সুস্থ পথে পরিচালিত করে। এ জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ করার জন্য ক্রমিক নীতি অবলম্বিত হয়েছে।
তৎকালীন আরবে মাদকতা মহামারির আকার ধারণ করেছিল। এ অবস্থা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে মাদকতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে মাদকতা ও জুয়া খেলাকে মহাপাপ বলা হয়েছে। এরপর সুরা নিসার ৪৩ নম্বর আয়াতে মদ্যপান করে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তারপর সুরা মায়েদার ৯০-৯১ নম্বর আয়াতে মদ চিরতরে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। সুরা মায়েদার ৯০ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘তোমরা এসব (মদ, জুয়া ইত্যাদি) থেকে বিরত থাকো।’ ৯১তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি বিরত থাকবে না?’ ৯২তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো আর (মদ-জুয়ার ব্যাপারে) নিজেকে রা করো।’
এ আয়াতগুলো থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়, ইসলামে মদ ও মাদকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোরআনের পাশাপাশি বহু হাদিসে মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মদপানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৭৬)
অন্য হাদিসে এসেছে : রাসুল (সা.) প্রেরিত এক ব্যক্তি যখন মদিনার অলিগলিতে প্রচার করতে লাগল যে মদপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তখন যার হাতে মদের যে পাত্র ছিল, সে তা সেখানেই ফেলে দিয়েছিল। (মুসলিম, হাদিস : ৩৬৬২)
মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০ শ্রেণির মানুষকে হাদিসে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। মদের নির্যাস বেরকারী, মদ্যপায়ী, পরিবেশক, বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদনকারী কর্মচারী, উৎপাদক, পরিবাহক, আমদানিকারক ও লভ্যাংশ ভোগকারী। (তিরমিজি ও মেশকাত, হাদিস : ২৭৭)

 

মাদকের দৈহিক কুফল
যেকোনো ধরনের মাদকদ্রব্য, যা নেশা সৃষ্টি করে, সুস্থ মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়, হিতাহিত জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি লোপ করে দেয়। নেশাদ্রব্য গ্রহণের ফলে ধীরে ধীরে মানুষের হজমশক্তি বিনষ্ট হয়। খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়, শারীরিক মতা লোপ পায়। অনেক মাদকদ্রব্য কিডনি বিকল করে দেয়। মস্তিষ্কের লাখ লাখ সেল ধ্বংস করে ফেলে। এ ছাড়া লিভার সিরোসিস রোগের সৃষ্টি হয়, যার চিকিৎসা দুরূহ।

মাদকতার আধ্যাত্মিক ও সামাজিক তি
মদের নেশায় বিভোর মানুষ এমন সব কা-কীর্তি করে বসে, যা পারস্পরিক ক্রোধ, প্রতিহিংসা ও লড়াইয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাদকতার মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতা বৃদ্ধি পায়। নেশাগ্রস্ত মানুষগুলো অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। অনেক েেত্র দেখা যায়, নেশায় উন্মত্ত ব্যক্তিরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বহু অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আধুনিক যুগে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চালকের মদ্যপানকে দায়ী করা হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মদপান ও নেশাদ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের অন্তর মরে যায়। মানুষ আল্লাহর স্মরণ, ইবাদত ও নামাজ থেকে উদাসীন হয়ে পড়ে।
মাদকের তিকর দিকগুলো ল্য করে এর প্রতিকারের জন্য বর্তমান বিশ্বে বহু দেশ ও জাতি এগিয়ে আসছে। আমরা চাই, বাংলাদেশও এগিয়ে যাক।