জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে প্রকম্পিত হলো বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ার। স্থানীয় সময় মধ্যরাত অর্থাৎ জাতীয় শোক দিবসের প্রথম প্রহরে টাইমস স্কোয়ারের বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেসে উঠার সাথে সাথে উৎফুল্ল প্রবাসীরা সমস্বরে স্লোগান ধরেন। এতে অংশ নেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাও।
একাত্তরের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে ১৮ মিনিটের জাদুকরি সেই ভাষণের অংশবিশেষ ধ্বনিত হয় বিলবোর্ডে। সে সময় আলো ঝলমল টাইমস স্কোয়ার যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল। বাঙালির এই বিশ্ববরেণ্য নেতার সেই বক্তব্য-সম্বলিত ভিডিও প্রতি দুই মিনিট অন্তর বিলবোর্ডে প্রদর্শিত হচ্ছে ১৫ সেকেন্ড করে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ফাহিম ফিরোজ নামক প্রবাসী এক বাংলাদেশীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নিউইয়র্ক ড্রিমস’ এ কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেই কর্মসূচিতে পরবর্তীতে সর্বাত্মক সহায়তা দেয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। বাংলাদেশের বেশ কটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে স্পন্সর হিসেবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র তথা উত্তর আমেরিকায় এটাই বড় ধরনের একটি কর্মসূচি বলে সকলে মনে করছেন। জাতীয় শোক দিবসের শেষ প্রহর পর্যন্ত এই প্রদর্শনী অব্যাহত থাকবে। এ উপলক্ষে টাইমস স্কোয়ারে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের একটি ব্যানার ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর ঘাতক হিসেবে দণ্ডিত রাশেদ চৌধুরীকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার দাবিতে।’
ব্যানারের পেছনে ছিলেন ফোবানার চেয়ারপার্সন জাকারিয়া চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়াসহ কর্মকর্তারা। নিউইয়র্ক অঞ্চলে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সরব।
এ সময় রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম আয়োজক ‘নিউইয়র্ক ড্রিমস’র মালিক ফাহিম ফিরোজকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, দিব্সটি শোকের হলেও জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ জাতির জনকের দেখানো পথে হাঁটছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অদম্য গতিতে এগুচ্ছে। তাই আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শোক-কে বাঙালিরা শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারলেই পনের আগষ্টের ঘাতকদের পরাজিত করা সম্ভব হবে এবং এর মধ্যদিয়েই জাতিরজনকের আত্মার প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো হবে।
করোনার পরিপ্রেক্ষিতে মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে তেমন কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি এই মার্কিন মুল্লুকে। টাইমস স্কোয়ারের বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুকে প্রদর্শনের এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে এ উপলক্ষে প্রবাসীদের মধ্যে নবচেতনার উন্মেষ ঘটলো। এই কর্মসূচি ঘিরে প্রবাসে বেড়ে উঠা প্রজন্মেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন ভাবনা তৈরী হবে বলে মন্তব্য করেছেন ফোবানার চেয়ারপার্সন জাকারিয়া চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া এ সময় বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্যে মার্কিন প্রশাসনকে অনুরোধ-উপরোধ অব্যাহত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তথা হোয়াইট হাউজ এবং কংগ্রেসে আমরা আরো সোচ্চার হবো-এটাই হচ্ছে আজকের শোক দিবসের সংকল্প।
বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুকে প্রদর্শনীর প্রাক্কালে টাইমস স্কোয়ারে সমবেত বিশিষ্টজনদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফাহিম ফিরোজ বলেন, আমার ব্যক্তি উদ্যোগটি সফল করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তা বিনয়ের সাথে স্মরণ করছি। গণমাধ্যমের আন্তরিক সহায়তার কথাও আমি ভুলবো না। বাঙালি জাতি তথা সারাবিশ্বের খেঁটে খাওয়া মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ভূমিকা চিরস্মরণীয় করতে এ ধরনের উদ্যোগের ভীষণ প্রয়োজন ছিল।