লাফিয়ে লাফিয়ে
বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ সাত
মাসে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে
আগস্ট মাসের প্রথম ২২ দিনে। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত আট হাজার ৪১ জনকে
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মধ্যে আগস্টের প্রথম ২২ দিনেই ভর্তি হয় পাঁচ
হাজার ৩৮৩ জন (৬৭ শতাংশ)। একইভাবে বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। জুলাই মাসের চেয়ে
দ্বিগুণ মৃত্যু হয়েছে আগস্ট মাসের প্রথম ২২ দিনে। জুলাইয়ে মারা গিয়েছিল ১২
জন, আর আগস্টের প্রথম ২২ দিনে মারা গেছে ২৪ জন। এভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের
সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশা নিধনে
আমাদের গৃহীত উদ্যোগগুলো খুব একটা কাজে আসছে না।
আক্রান্তের সংখ্যা
বিবেচনায় দেখা গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায়ই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার কিছু
এলাকায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। সর্বাধিক ঘনত্ব
পাওয়া গেছে বাসাবো ও গোড়ান এলাকায় (৭৩.৩ শতাংশ)। ব্রুট ইনডেক্স বা ঘনত্ব
সূচক অনুযায়ী তার পরেই রয়েছে এলিফ্যান্ট রোড-সায়েন্স ল্যাবের আশপাশের এলাকা
(৬৬.৭%), মগবাজার-নিউ ইস্কাটন এলাকা (৫৬.৭%), আর কে মিশন রোড-টিকাটুলী
এলাকায় (৫০%), নিকুঞ্জ ও আশপাশের এলাকা (৪৮.৪%), কল্যাণপুর-দারুস সালাম
(৪৬.৭%)। কাছাকাছি ঘনত্ব রয়েছে আরো অনেক এলাকায়। জরিপে দেখা যায়, ঘরে জমানো
পানিতেই সর্বোচ্চ ১৮.৫ শতাংশ মশার বংশবিস্তার হয়। এ ছাড়া প্লাস্টিক
ড্রামে ১২.১, প্লাস্টিক বালতিতে ৯.৪, ফুলের টবে ৭.৫ এবং পরিত্যক্ত টায়ারে
৬.৯ শতাংশ লার্ভা পাওয়া যায়। অন্যদিকে আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনে ৪৪.২, একক
ভবনে ২৪.৫, নির্মাণাধীন ভবনে ১৯.১, বস্তি এলাকায় ৯.৭ এবং পরিত্যক্ত জমিতে
২.৬ শতাংশ লার্ভা দেখা যায়। এ থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে এডিস মশার বংশবিস্তার
বাড়িঘরের ভেতরেই বেশি হয়, যেখানে মশক নিধনকর্মীদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই
চলে। তাহলে এই মশা নিধন করা যাবে কিভাবে? ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেরই বা উপায় কী?
উপায় হচ্ছে, মানুষের সচেতন হওয়া এবং নিজ বাড়িতে এডিস মশার বংশবিস্তার যাতে
না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া, যা এখনো কাঙ্তি পর্যায়ে তো
নয়ই, তার ধারেকাছেও নয়। করোনায় শিশুরা কম আক্রান্ত হলেও ডেঙ্গুতে তারাই
আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তাই ডেঙ্গু থেকে শিশুদের রায় অভিভাবকদের বেশি উদ্যোগী
হতে হবে। শিশুরা লণ-উপসর্গ বুঝে না, বলতেও পারে না। ফলে অভিভাবকদের বুঝতে
দেরি হয়ে যায় এবং শিশুর অবস্থা জটিল হয়ে যায়।
ঢাকার যেসব এলাকায় এডিস
মশার ঘনত্ব বেশি রয়েছে, সেখানে মশা নিধনে ব্যাপক অভিযান চালাতে হবে।
স্থানীয় মানুষকে এসব কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং তাদের সচেতন করতে
হবে।