Published : Wednesday, 25 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 25.08.2021 1:25:11 AM
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ||
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কোম্পানীগঞ্জ বাজারে দীর্ঘ ১৬ বছর আগে জেলা পরিষদ অপরিকল্পিত ভাবে খালের উপর দোকান ভিটি বন্দোবস্ত দেয়ায় দূর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার জনগন। দূর্ভোগ লাগবে নিরব ভূমিকায় জেলা পরিষদ, স্থানীয় প্রশাসন ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোন প্রকার উদ্যোগ না থাকায় ব্যবসায়ীদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ।
কুমিল্লা উত্তর জেলার বৃহত্তম পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার কেন্দ্রস্থল হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত কোম্পানীগঞ্জ বাজার। সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে তলিয়ে যায় কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর আঞ্চলিক সড়ক ও বাজারের যাওয়ার যোগযোগ ব্যবস্থা। উপরে ওঠে পড়ে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা এবং নোংরা দূষিত পানি। এতে করে ভোগান্তিতে পরে ছোট-বড় কয়েক হাজার দোকানীসহ আশ-পাশের কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। বছরের অধিকাংশ সময় বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলি-গলিতে পানি থাকার ফলে ক্রেতারা মালামাল ক্রয় করে নিয়ে যেতে ভরসা করতে হয় নৌকার উপর। জলাবদ্ধ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে যানবাহন গর্তে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা ও তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাজারের ভিতর হাঁটু পানি জমে যায়। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন জমে থাকে পানি। নোংরা ও দূষিত পানির কারণে বাজারে তেমন কাস্টমার আসে না। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হোক। এ ভাবে চলতে থাকলে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আমরা ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।
সিএনজি চালক মাসুম মিয়া বলেন, বৃষ্টি হলেই আমরা আর বাজারে যেতে পারি না। যাত্রীদের মন রক্ষার্থে বাজারে যেতে গিয়ে কয়েক বার আমার সিএনজি উল্টে গেছে। আর এই গাড়ি মেরামত করতে কয়েক মাসের ইনকাম চলে যায়। যার ফলে বেশি টাকা দিলেও এখন আর ওই বাজারে যাই না।
কোম্পানীগঞ্জ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ২০০৫ সালে তৎকালিন এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের সহযোগীতায় উনার নেতা-কর্মীরা জেলা পরিষদের কাছ থেকে সু-কৌশলে খালটি বন্দোবস্ত নিয়ে আসে। পরে কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে গড়ে উঠে দোকান-পাট। এরপর ২০১২ সালে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সহযোগীতায় উনার নিকট আত্মীয় এবং নেতা কর্মীরা খালের বাকি অংশটুকু দখল করে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণ করে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বাজারের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা। আমরা চাই বৃহত্তর এই বাজারের স্বার্থে খালটি পূনরায় উদ্ধার করা হোক।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, জায়গাটি নিয়ে জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসক ও কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রী কলেজ কতৃপক্ষের মধ্যে মামলা চলমান। যে কারনে নির্মানাধীন দোকান গুলো উচ্ছেদ করে আমরা বাজারের সমস্যা নিরসনে স্থায়ী ভাবে কিছু করতে পারছি না। গত কিছুদিন আগে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাস্তার পূর্ব পাশের বন্দোবস্তকৃত দোকান ভেঙ্গে ৫ ফিট জায়গা উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেখানে কিছুদিনের মধ্যেই বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ করা হবে।
কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, প্রথমতো আমাদের অগোচরে এইসব জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করে বন্দোবস্ত নিয়ে থাকে। দ্বিতীয়তো বন্দোবস্ত দেয়ার সময় বলা থাকে যে কোন জন দূর্ভোগ হলে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। যদি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বন্দোবস্ত দেয়া এই জায়গাটির জন্য কোন প্রকার জন ভোগান্তি তৈরী হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।