গত
রোববার উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত পরীক্ষামূলক যাত্রার মধ্য দিয়ে
মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আগামী বছরের
ডিসেম্বরে এটি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হবে আশা করা যাচ্ছে। উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০২২ সালের জুন
থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে তিনটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এগুলোর
মধ্যে জুনে পদ্মা সেতু, এরপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং ডিসেম্বরে
মেট্রোরেল যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়ার কথা।
মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক
যাত্রা দেশবাসীর মধ্যে আশাবাদ এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করেছে। জাপানের
অর্থ ও কারিগরি সহায়তায় ঢাকাবাসীর স্বপ্নের এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
সবাইকে আমাদের অভিনন্দন। প্রত্যাশা থাকবে, আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার
আগেই সব স্টেশন, সংযোগ সড়কের কাজসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ করা হবে। উত্তরা
থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এই পথে
১৬টি স্টেশন। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ স্টেশন ও পথের কাজ শেষ হয়নি। প্রাথমিক
পরীক্ষামূলক চালু ছিল যাত্রীছাড়া। এরপর যাত্রীসহ মূল পরীক্ষার কাজ চলবে, যা
‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট’ হিসেবে পরিচিত। এ সময় মেট্রোরেলের ১৭-১৮টি ব্যবস্থা
একসঙ্গে ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা দেখা হবে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়,
ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট ছয় মাস বা এর চেয়ে বেশি সময় ধরে হতে পারে। এরপর যাত্রী
নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। মেট্রোরেল ও লাইনের নকশা অনুযায়ী, এটি সর্বোচ্চ
১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। তবে যাত্রী নিয়ে কত গতিতে চলবে, স্টেশনে
কতক্ষণ থামানো হবে এবং ভাড়া কত হবে, এসব বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বর্তমানে
উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু
মেট্রোরেলে লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। মেট্রোরেলে প্রতিদিন পাঁচ লাখ যাত্রী
যাতায়াত করতে পারবেন। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার
যানজট যেমন কমবে, তেমনি জিডিপিও ১ শতাংশ বাড়বে। ঢাকার অসহনীয় যানজটে কেবল
মানুষের দুর্ভোগই বাড়ছে না, দেশও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মেট্রোরেল
চালুর আগে কয়েকটি বিষয় আমলে নিতে হবে। প্রথমত, স্টেশন এবং এর সংযুক্ত
সড়কগুলোর ব্যবস্থাপনা। স্টেশনে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় এড়াতে হবে, যাতে যাত্রীরা
নির্বিঘেœ ওঠানামা করতে পারেন। এরপর স্টেশন থেকে সংযুক্ত সড়কগুলোতে কী
ধরনের বাহন চলবে, তা–ও আগে থেকে ঠিক করতে হবে। ঢাকা শহরের সড়ক রুটগুলো
উত্তর-দক্ষিণমুখী। সে ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মানুষ যাতে
মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
মেট্রোরেল
পুরোপুরি চালু হতে আরও ১৫ মাস সময় লাগবে। এই সময়ে নগরের যানজট কীভাবে
সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, তা-ও কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। ঢাকা শহরের সড়ক
পরিবহনে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে, যা কেবল যানজটই বাড়াচ্ছে না, অসুস্থ
প্রতিযোগিতার জন্য দুর্ঘটনারও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি
করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক শহরজুড়ে বাস ফ্র্যাঞ্চাইজি বা এক রুটে এক
কোম্পানির বাস চালুর ব্যাপারে উৎসাহী ও তৎপর ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে এই
পদ্ধতিতে হাতিরঝিল থেকে গুলশান ২ পর্যন্ত ‘ঢাকা চাকা’ চালু হয়েছিল এবং তা
সফলভাবে চলছে। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আরও কয়েকটি রুটে একই
পদ্ধতিতে বাস চালু করার পরিকল্পনা আছে। ধীরে ধীরে সব রুটেই এই পদ্ধতিতে বাস
চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপে যেন এই
পরিকল্পনা মাঝপথে থেমে না যায়, সেই নিশ্চয়তাও নগরবাসী পেতে চায়।