আ ব ম ফারুক ||
বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে বর্তমানে যেসব টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোকে ধরন অনুযায়ী ভাগ করলে পাঁচ রকমের পাওয়া যায়। যেমন ১. এম-আরএনএ টিকা (যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক কম্পানির যৌথ উদ্যোগ, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না); ২. এডিনোভাইরাস ভেক্টরভিত্তিক টিকা (যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও সুইডেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগ, রাশিয়ার স্পুিনক ভি, যুক্তরাষ্ট্রের জনসন অ্যান্ড জনসন, কাজাখস্তানের কাজভ্যাক, ইরানের কোভ-ইরান বারেকাত ও কোভ-পার্স); ৩. নিষ্ক্রিয় ভাইরাসভিত্তিক টিকা (গণচীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক, ভারতের ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন); ৪. প্রোটিন সাব-ইউনিট টিকা (কিউবার সবেরানা ১, সবেরানা ২ ও আবদাল্লা, যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স); এবং ৫. ডিএনের খণ্ডিতাংশ দিয়ে তৈরি টিকা (অতি সম্প্রতি ভারতের জাইডাস কাডিলা হেলথকেয়ারের জাইকভ-ডি)।
এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো কিছু টিকার গবেষণা চলছে। সেগুলোর মধ্যে সিনথেটিক ডিএনএ, মুখে খাওয়ার এবং নাকের স্প্রে বা ইনহেলার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে এমন সব উদ্যোগও রয়েছে। গবেষণাগুলো সফল হোক, বিশেষ করে মুখে খাওয়ার ও নাকের স্প্রে বা ইনহেলার জাতীয় টিকাগুলো বাজারে চলে এলে কতই না ভালো হতো।
বাংলাদেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল উন্নত দেশগুলোর মতোই একেবারে শুরুর দিকে। শুরুটা খুবই ভালো ছিল; কিন্তু টিকা দেওয়া শুরুর কিছুদিন পর ভারতে করোনা মহামারি প্রকট আকার ধারণ করলে তারা টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে টিকার সংকট শুরু হয়। বিশ্ববাজারে তখন কোথাও টিকা পাওয়া যাচ্ছিল না। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে সে সংকট কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশে আবার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারের হাতে এখন টিকার ভালো মজুদ আছে এবং আশা করা যায় বিদেশ থেকে আসা অন্যান্য টিকার পাশাপাশি ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ না এলে বা তেমন প্রকট না হলে সিরাম ইন্ডিয়ার টিকাও এ মাসের শেষের দিকে আবার আসতে শুরু করবে। গণটিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা আমাদের দেশের জন্য খুব দরকার। টিকা প্রদানের জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো ও দক্ষ জনবল আমাদের আছে। গত মাসে তা প্রমাণিতও হয়েছে। এখন মূলত দরকার টিকার অব্যাহত সরবরাহ এবং তার জন্য প্রয়োজন অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেরা টিকা উৎপাদন করা। বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন যে তারা সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনার টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
শধষবৎশধহঃযড়বাংলাদেশের কিছু ওষুধ কম্পানির নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির বদনাম দীর্ঘদিন ধরেই আছে। এর প্রধান কারণ সেসব কম্পানি মালিকের নীতি-নৈতিকতাহীন মুনাফার উদগ্র লোভ এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের বেশির ভাগ কর্মকর্তার ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা। কিন্তু তাঁদের কথা বাদ দিলে মূল ওষুধশিল্পের সার্বিক অবস্থান অত্যন্ত উন্নত এবং এবারের করোনা মহামারিকালে তা আবার প্রমাণিত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই কম্পানিগুলো ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। এই অগ্রসর অবস্থার মধ্যে কিছু কম্পানি আবার দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন রোগের টিকা উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে। এ রকমই একটি কম্পানি ইনসেপ্টা সম্প্রতি করোনার টিকা বাংলাদেশে তাদের কারখানায় উৎপাদনের জন্য গণচীনের সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ইনসেপ্টা চীনের এই টিকা তৈরি করবে ফিল-ফিনিশ পদ্ধতিতে অর্থাৎ টিকা কিছুটা চীনে আর কিছুটা ইনসেপ্টা তৈরি করবে এবং ইনসেপ্টা এ জন্য সিনোফার্ম থেকে বাল্ক হিসেবে হাফ-প্রসেসড টিকা আমদানি করবে। এর ফলে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহের দুশ্চিন্তা ইনসেপ্টার থাকল না। টিকার জটিল প্রযুক্তির কাঁচামাল সংগ্রহ করা বিশ্বব্যাপী টিকা উৎপাদনকারীদের জন্য একটা দুশ্চিন্তা। কিন্তু ফিল-ফিনিশ পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদনের ফলে উৎপাদন বন্ধের দায়ভার ইনসেপ্টার নিতে হবে না। আশা করা যায়, ইনসেপ্টার উৎপাদিত চীনের এই টিকা আগামী তিন মাস পরই আমাদের জনগণের হাতে আসবে।
কিন্তু তার পরও কথা থাকে। যদি বাল্কের সরবরাহ কখনো কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন সমস্যা হবে। এই ঝুঁকি নিরসনে প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে শুরু থেকে শেষ অর্থাৎ এ-টু-জেড পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদন করার শর্ত থাকলে আর বাল্কের জন্যও কারো মুখাপেক্ষী হতে হয় না। বাল্ক তখন নিজেরাই তৈরি করতে পারবে এবং তখন দেশের অন্য কম্পানিগুলোও বাল্ক নিয়ে ফিল-ফিনিশ করতে পারবে।
প্রথম ধরনের অর্থাৎ এম-আরএনএ টিকা অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির, কাঁচামাল অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য, এর উৎপাদন খরচ অত্যন্ত বেশি, উৎপাদনকালে এবং পরবর্তী সময়ে একে রাখতেও হয় অত্যন্ত কম তাপমাত্রায়, অত্যন্ত দক্ষ জনবল দরকার যা আমাদের নেই। আর একটি মাঝারি আকারের কারখানায় এটি উৎপাদন করা যাবে প্রতি মাসে মাত্র কয়েক লাখ।
দ্বিতীয় ধরনের অর্থাৎ এডিনোভাইরাসভিত্তিক টিকার উৎপাদনপ্রযুক্তি তুলনামূলকভাবে সহজ, মূল কাঁচামাল আমেরিকার মাত্র একটি কম্পানি থেকে নিতে হয়, উৎপাদন খরচ সহনীয়, মোটামুটি কম তাপমাত্রায় উৎপাদন সম্ভব, এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল আমাদের আছে, একটি মাঝারি কারখানায় প্রতি মাসের উৎপাদন এম-আরএনএ টিকার প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ।
তৃতীয় ধরন অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় ভাইরাসভিত্তিক টিকা প্রচলিত পদ্ধতির, প্রযুক্তিটির মূল কাঁচামাল আমদানি করতে হলেও মোটামুটি সহজলভ্য, উৎপাদন খরচ মোটামুটি, এর জন্য অনেক ঠাণ্ডা তাপমাত্রার প্রয়োজন নেই, এটি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল আমাদের পর্যাপ্ত আছে, এর উৎপাদনক্ষমতা মাসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ।
চতুর্থ ধরনের অর্থাৎ প্রোটিন সাব-ইউনিট টিকা মোটামুটি আধুনিক প্রযুক্তির, দুষ্প্রাপ্য কাঁচামালের প্রয়োজন নেই, যে উপাদানগুলো প্রয়োজন সেগুলো আমাদের ওষুধ কারখানাগুলো থেকে পাওয়া যাবে, উৎপাদন খরচ কম, সাধারণ তাপমাত্রা প্রয়োজন, উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল দেশে যথেষ্ট রয়েছে, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম বলে দামেও হবে সস্তা এবং প্রতি মাসে এই প্রযুক্তিতে কয়েক কোটি টিকা উৎপাদন সম্ভব।
পঞ্চম অর্থাৎ ডিএনের খণ্ডিতাংশ দিয়ে তৈরি টিকা এম-আরএনএ টিকার মতোই অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির, কাঁচামাল বাইরে থেকেই আনতে হবে, সব দক্ষ জনবল নেই, তাপমাত্রা লাগবে প্রায় এম-আরএনএ টিকার মতোই, ঝুঁকিপূর্ণ প্রযুক্তি, উৎপাদন খরচ বেশি অর্থাৎ এম-আরএনএ টিকার মতোই এবং প্রতি মাসে একটি মাঝারি আকারের কম্পানিতে লাখ বিশেক টিকা উৎপাদন সম্ভব।
এই বাস্তবতায় সব বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে আমাদের দেশে যে টিকা উৎপাদন করা সম্ভব তা হলো তৃতীয় ও চতুর্থ ধরনের টিকা। তৃতীয় ধরনের টিকা ফিল-ফিনিশ পদ্ধতিতে উৎপাদনের জন্য ইনসেপ্টা এরই মধ্যে সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে। জানা গেছে, তারা কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরুর জন্য এখন কারখানার অভ্যন্তরীণ সুবিধাগুলোকে রি-অ্যারেঞ্জ করছে। ফিল-ফিনিশ করার জন্য আরো যে দুটি কম্পানি রয়েছে সেগুলো হলো হেলথকেয়ার ও পপুলার। এ ছাড়া টিকার কারখানা ভবন তৈরি শেষ করেছে জেএমআই।৪
এখন এটি স্পষ্ট যে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক হচ্ছে চতুর্থ ধরনের টিকা অর্থাৎ প্রোটিন সাব-ইউনিট টিকা উৎপাদন করা। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সীমাবদ্ধতার কারণে এই গ্রুপে কিউবার যে তিনটি টিকা রয়েছে, যার মধ্যে একটি (সবেরানা-২) ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য, তার কোনোটিরই উৎপাদনের উদ্যোগ আমাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে কিউবা থেকে বার্টার ট্রেডের মাধ্যমে পাটজাত পণ্য রপ্তানি ও বিনিময়ে চিনি আমদানি করে আমরা কী মহাবিপদে পড়েছিলাম তা আমাদের স্মরণে আছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের এটিও নাকি ছিল অন্যতম কারণ। কিন্তু এই গ্রুপে আরো দুটি টিকা নিয়ে আমরা এগোতে পারি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স এর মধ্যে একটি। এটি এখনো বাজারে আসেনি। এর তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রায় শেষের পথে। বাংলাদেশে এটি প্রযুক্তি স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বেক্সিমকো। তারা এই লক্ষ্যে একটি বড় কারখানা তৈরি করছে, যা শেষ হবে সম্ভবত অক্টোবরে। জানা গেছে, এরপর তারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কারখানার প্রি-কোয়ালিফিকেশন করাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দিয়ে। কারখানার সব কিছু ঠিক থাকলে এবং আন্তর্জাতিক মানের হলে কমপক্ষে নভেম্বরের পুরো মাসটিই লেগে যাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রি-কোয়ালিফিকেশন সনদ পেতে। নতুন কোনো সমস্যা তৈরি না হলে আশা করা যায় বেক্সিমকোর তৈরি নোভাভ্যাক্সের টিকা আমরা আগামী বছরের শুরু থেকে ইনশাআল্লাহ পেতে থাকব।
এই প্রোটিন সাব-ইউনিট গ্রুপে আরো একটি নতুন টিকা অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে, যা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর স্যার অ্যান্ড্রু পোলার্ড, প্রফেসর অ্যালেন টাউনসেন্ড প্রমুখের উদ্ভাবিত। প্রফেসর সারা গিলবার্টের নেতৃত্বের গবেষকদলের আবিষ্কৃত যে টিকাটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা এখন উৎপাদন করছে, অত্যন্ত প্রবীণ এই বিজ্ঞানীরা তার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। নতুন এই টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত বিখ্যাত বায়োটেক কম্পানি ‘ডায়াডিক’ চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এই বিখ্যাত অধ্যাপকরা অত্যন্ত ‘মানবিক’ বলে পেশাজগতে সুবিদিত এবং তাঁরা চান গরিব দেশগুলোর জন্য সস্তায় একটি কার্যকর টিকা বানাতে। এখন তাঁদের এই উদ্ভাবনের প্রি-ক্লিনিক্যাল এনিম্যাল স্টাডি সমাপ্ত হয়েছে। এগুলোর প্রাথমিক ফলাফলও অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে ইউরোপ মহাদেশের জার্মানিকে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। অন্যান্য মহাদেশের কোন কোন দেশে এর ট্রায়াল চলবে তা নির্বাচনের প্রক্রিয়াও চলছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যাদি মতে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ভিত্তিতে এই টিকার আরো উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্বে থাকবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই টিকার মালিকানাস্বত্ব থাকবে ডায়াডিকের। এই কম্পানি বিভিন্ন বায়োটেক প্রডাক্ট, বিশেষত বায়োলজিক্যাল কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশ সরকার নিজ মালিকানার এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেডের অধীনে গোপালগঞ্জে টিকার যে কারখানাটি তৈরির কাজ শুরু করেছে সেখানে এই টিকাই উৎপাদন করা হবে বলে জানা গেছে। করোনা টিকার জরুরি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্যে প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড স্ট্রাকচার ও ফেসিলিটিস আমদানি করা যায় কি না তারও নাকি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এ রকম একটি উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন।
এই টিকার সুবিধাগুলো হচ্ছে : ১. এটি যেহেতু প্রোটিন সাব-ইউনিট ধরনের টিকা, তাই এর মাধ্যমে মানুষের শরীরে কোনো নিউক্লিক এসিড প্রবেশ করানো হচ্ছে না। ফলে আমাদের দেশের অনেক মানুষের মনে টিকা নেওয়ার প্রতি অহেতুক ভীতি বা ‘মিসইনফরমেশন’ ছড়ানো কমবে; ২. এই টিকাকে ‘থার্মাল টিকা’ বলা যায়। কারণ এটি গরম দেশগুলোর তাপমাত্রায় সহনীয় এবং একে বিতরণ ও সংরক্ষণের জন্য কোনো ফ্রিজিং সিস্টেমের প্রয়োজন হবে না; ৩. এর উৎপাদন খরচ অনেক কম, ফলে এটি বর্তমানে সবচেয়ে সাশ্রয়ী অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চেয়েও দামে কম হবে; ৪. প্রতি মাসে এই পদ্ধতির কয়েক কোটি টিকা স্বল্প আয়াসেই উৎপাদন করা সম্ভব; ৫. অন্যান্য টিকা উৎপাদন করতে কাঁচামাল একটি বড় সমস্যা হবে। কারণ টিকার উন্নত প্রযুক্তির কাঁচামাল পৃথিবীর মাত্র কয়েকটি কম্পানি উৎপাদন করে। কিন্তু এই টিকার কাঁচামাল খুবই সহজলভ্য, এমনকি বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের কাছ থেকে এর বেশ কিছু কাঁচামাল পাওয়া যাবে; ৬. এখান থেকে বাল্ক নিয়ে ইনসেপ্টা, হেলথকেয়ার, পপুলার, জেএমআই ইত্যাদি কম্পানিও ফিল-ফিনিশ পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদন করে বিপুল পরিমাণ টিকার জোগান দিতে পারবে; ৭. ফলে নব-উদ্ভাবিত এই টিকাকে ‘নতুন প্রজন্মের টিকা’ বলা যেতে পারে।
বাংলাদেশে এই টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাপকভাবে শুরু করা গেলে আমাদের টিকাপ্রাপ্তির সংকট কমবে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী বর্তমানে বিরাজমান টিকার প্রাপ্যতার সংকটের মধ্যেও আমরা দেশের ৮০ শতাংশ জনগণকে এই টিকা দিয়ে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ দ্রুততম সময়ে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব। বিপুল পরিমাণে সহজ উৎপাদনের কারণে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কোটি কোটি টিকা বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। ফলে বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি গরিব দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ মানবিক সহযোগিতাও করা হবে। দেশবাসী সেই সোনালি দিনের প্রত্যাশায়।
লেখক : অধ্যাপক ও পরিচালক, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়