নতুন পদোন্নতি
পাওয়া কর্মকর্তাদের যোগ করলে জনপ্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা দাঁড়াবে
৫০৫-এ; যদিও পদের সংখ্যা ২১২টি। মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি
প্রজ্ঞাপনে ৮৯ যুগ্ম সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করেছে।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে দুজন বর্তমানে সৌদি আরব ও জার্মানিতে
বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত। অন্যরা দেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে
কর্মরত। নিয়মানুযায়ী তাঁদের সবাইকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা করা হয়েছে।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ৯৮ জন যুগ্ম সচিবকে
অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছিল সরকার। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এবার
পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা ছিলেন ৩৭২ জন। এর মধ্যে ৮৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়ায়
অন্যরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়ে
প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা হলো ৫০৮। প্রতি পদের বিপরীতে অতিরিক্ত
সচিব আছেন ২ দশমিক ৩৮ জন। বিশ্বের আর কোনো দেশে এই নজির আছে বলে জানা নেই।
যেকোনো
আধুনিক রাষ্ট্রে প্রশাসনের কাঠামো তথা এর পদ ও লোকবল নির্ধারণ করা হয়
চাহিদা অনুযায়ী। সরকার যদি মনে করে নতুন করে ৮৯ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে
পদোন্নতি দেওয়ার প্রয়োজন আছে, সে ক্ষেত্রে তাঁদের পদ সৃষ্টি করতে হবে। কেবল
অতিরিক্ত সচিব পদে নয়, সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদেও নির্ধারিত পদের
চেয়ে অনেক বেশি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত বছর ৪৫০টি যুগ্ম সচিব
পদের বিপরীতে ৭৫১ জন কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ৬টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ৬৩৩
জন কর্মকর্তা উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
পদ ছাড়া জনপ্রশাসনে
পদোন্নতি দেওয়া একটি মন্দ দৃষ্টান্ত। এতে প্রশাসনে গতিশীলতা কমে যায় এবং
বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়াও অস্বাভাবিক নয়। অতীতে এ ধরনের পদোন্নতি নিয়ে
কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষের ঘটনাও ঘটেছে। একই পদে নিযুক্ত হয়ে কেউ
অতিরিক্ত সচিব, কেউ যুগ্ম সচিবের কাজ করবেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। পদ ছাড়া
পদোন্নতির ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ
সরকারের আমলে তার প্রাদুর্ভাব উত্তরোত্তর বাড়ছে। পদহীন পদোন্নতির এই
সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
সরকার যখন কর্মকর্তাদের ঢালাও পদোন্নতি
দিয়ে যাচ্ছে, তখন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রশাসন সম্পর্কে কী
বলেছেন? তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, জনগণ তথা
সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাও দুর্নীতি। এর পাশাপাশি
প্রতিমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বলার নিয়ম নেই বলেও
জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রীর এই উক্তির পেছনে যে কঠিন সত্য লুকিয়ে
আছে, তা হলো সেবাপ্রার্থীরা সরকারি দপ্তরে এসে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের
দ্বারা হয়রানির শিকার হন। কখনো কখনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে, যা কখনো কাম্য
নয়। সেবাপ্রার্থীরা অনেক সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করারও
সুযোগ পান না। বাধ্য হয়ে তাঁরা নিম্নস্তরের কোনো কর্মচারীকে উৎকোচ দিয়ে
কিংবা দালালের সহায়তায় কাজ সম্পাদন করেন। যদি এটাই প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র
সচিবালয় বা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘কর্মসংস্কৃতি’ হয়ে থাকে, তাহলে যত
পদোন্নতিই দেওয়া হোক না কেন, জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হতেই থাকবে।
প্রকৃতপক্ষে
প্রশাসনকে জনবান্ধব করতে হলে সরকারি কর্মকর্তাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন
আনতে হবে। ঢালাও পদোন্নতি দেওয়া বন্ধ করে সর্বস্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে
হবে।