শফিকুল ইসলাম পলাশ, হোমনা ||
কুমিল্লার
হোমনায় এক বাক প্রতিবন্ধী মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার
বাজানো এবং ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দুুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা
ঘটেছে। এতে ঘারমোড়া গ্রামের কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ দুই গ্রামের অন্তত ২০ জন
আহত হয়েছেন। ঘারমোড়া গ্রামের মারাত্মক আহত তিনজনকে ঢাকা এবং কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ঘটনায় হোমনা থানায় একটি
মামলা হয়েছে এবং ফারুক আহমেদ বকুল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রবিবার
সকালে উপজেলার ঘারমোড়া ইউনিয়নের বাড় ঘারমোড়া এবং ফুজুরকান্দি গ্রামের
মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। ফুজুরকান্দি গ্রামের লোকজনের হামলায় বাজারের
কয়েকট দোকানপাটেও হামলা চালানো হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে শনিবার পুলিশ
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাজারে পুলিশ মোতায়েন
রয়েছে। এডিশনাল পুলিশ সুপার এম তানভির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আহতরা
হলেন- ঘারমোড়া ঘামের রাজিব (২৭), আসাব উদ্দিন (৩৫), আলম প্রকাশ কেট্টা
(৫৫), আজগর আলী (৬০), রাজিব (২৭), জিলানী (৫০), অজিত (২২), ইকরাম (১৪),
ইকবাল (২৫), শাহ ্অলম (৩২), কবির (২৮), নজুরুল (২৬), ও ফুজুর কান্দি
গ্রামের শুভ (২২), তানভির (১৬) ও আরিফ (২১)। আরও কয়েকজন চিকিৎসার জন্য
বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়
ঘারমোড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় উপজেলার
বাগমারা গ্রামে এক ছেলের সঙ্গে। শুক্রবার বিয়ের এবং গত বৃহস্পতিবার ছিল
মেয়ের গায়ে হলুদ। এ উপলক্ষ্যে মেয়ের বাবার ইচ্ছানুযায়ী গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে
ডিজে মিউজিকের আয়োজন করা হয়। রাত এগারোটার দিকে পাশর্^বর্তী ফজুর কান্দি
গ্রামের রাসেল, খোকন, বকুলসহ ৮/৯ জন ছেলে মিউজিক বাজালে চাঁদা দাবি করে এবং
মেয়েদের ছবি উঠাতে থাকে। এ সময় বড় ঘারমোড়া গ্রামের কয়জন ছেলে তাদের বাধা
দেয়। এতে ওই ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের স্পিকার বাজানো বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে
উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে গত শনিবার
সকালে বড় ঘারমোরা গ্রামের মো. সাব মিয়া বাজারে দুধ বিক্রি করতে গেলে ফজুর
কান্দি গ্রামের লোকজন তার দুধ ফেলে দিয়ে মারধর করে।
এই ঘটনায় জাহাঙ্গীর
আলম বাদি হয়ে ফজুর কান্দি গ্রামের ৭ জনের নামোল্লেখসহ আরও ২২ জনকে অজ্ঞাত
আসামি করে হোমনা থানায় একটি মামলা করেন। ফজুরকান্দি গ্রামের ফারুক আহমেদ
বকুল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই নিয়ে দুই গ্রামের লোকজনের
মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। রবিবার সকাল সাতটার দিকে দুই গ্রামের লোকজন
ঘাড়মোড়া বাজারে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ২০ জন আহত হয়।
বড় ঘারমোরা
গ্রামের আউয়াল মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার হুজুর কান্দি গ্রামের কয়েকজন বখাটে
ছেলেরা স্পিকার বাজাতে বাধা দেয় এবং মেয়েদের ছবি উঠায়। শনিবার আমাদের
ঘারমোড়া গ্রামের মো. সাব মিয়া বাজারে দুধ বিক্রি করতে গেলে ফজুর কান্দি
গ্রামের লোকজন তাকে মারধর করে। আজকে (রবিবার) সকালে ফজুর কান্দি গ্রামের
লোকজন ইয়ারগানসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমাদের গ্রামের লোকজনের ওপর হামলা
করে। তাদের গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে ।
ঘারমোড়া গ্রামের সাব মিয়া বলেন, ফজুর কান্দি গ্রামের জামাল, সাহাবুদ্দিন ও রশিদের নির্দেশে তাদের ওপর হামলা করেন।
অবশ্য তারা এ ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বিকার করেন।
এ
দিকে হুজুর কান্দি গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, ছেলে পেলেদের মধ্যে
সমস্যার ঘটনা আমরা মিটমাট করার জন্য চেষ্টা করছিলাম। এই সময় বড় ঘারমোরা
গ্রামের লোকজন আমাদের গ্রামের লোকজনের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। কোনো
গুলির ঘটনা ঘটেনি। এদের ইটপাটকেলের আঘাতে আমাদের লোকজন আহত হয়েছে।
ঘারমোড়া
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মোল্লা জানান, বৃহস্পতিবার বিয়ে
বাড়িতে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ছেলেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে গত শনিবার একজনকে মারার ঘটনায় থানায় মামলা হলে একজন গ্রেফতার
হয়। আজকে বিষয়টি মিটমাট করার জন্য বসারর কথা ছিল। কিন্ত এরই মধ্যেই
ফজুরকান্দি ও বড় ঘারমোরা গ্রামবাসি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আমাদের নিয়ন্ত্রণের
বাইরে চলে যাওয়ায় থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
হোমনা
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আবুল কায়েস আকন্দ জানান, বড় ঘাড়মোয় একটি
বিয়ে বাড়িতে ফজুর কান্দি গ্রামের কয়েকজন ছেলে ছবি তুললে ঐ গ্রামের লোকজন
বাধা দেয়। ওই সময় উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে গত শনিবার
ঘারমোড়া গ্রামের একজনকে মারধর করে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে একজন
গ্রেপ্তার হয়েছে। এরই জেরে রবিবার আবারও মারামারির ঘটনা ঘটে। বর্তমানে
পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।