
গত
কয়েক দিনে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। তা সত্ত্বেও
পদ্মা, যমুনাসহ সাতটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। মূলত উজান থেকে নেমে
আসা ঢলের কারণে গত রবিবারও ১৫টি পয়েন্টে নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হয়েছে। রবিবার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৪৪
সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরই মধ্যে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম,
জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী,
ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার বিস্তীর্ণ নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বন্যা
পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মতে, এই এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির আরো
অবনতি হতে পারে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় এরই মধ্যে বহু মানুষ উঁচু স্থানে গিয়ে
আশ্রয় নিয়েছে। বহু মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। হাজার হাজার হেক্টর
জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে সবজির আবাদ, পুকুরের মাছ। বন্যাদুর্গত
এলাকাগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। কাজ বন্ধ হয়ে
যাওয়ায় দিনমজুরি করা মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। তার ওপর শুরু
হয়েছে নদীভাঙন। এরই মধ্যে শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে হাওরাঞ্চলেও।
বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক
দুর্যোগে মোট যত ক্ষয়ক্ষতি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয় শুধু বন্যায়।
তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যার প্রাদুর্ভাব ক্রমেই বাড়ছে। আগে
পাঁচ থেকে ১০ বছর পর পর বড় বন্যা হলেও এখন প্রায় প্রতিবছরই বন্যায় ব্যাপক
ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমরা বন্যাকে আটকাতে পারব না; কিন্তু বন্যার ক্ষয়ক্ষতি
কমানোর চেষ্টা করতেই পারি। বর্ষায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যে
পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে তার ৯৫ শতাংশই আসে উজানে থাকা দেশগুলো
থেকে। যখন নদীগুলো গভীর ছিল, তখন এই পানি নদী দিয়েই নেমে যেত। এখন গভীরতা
কমে যাওয়ায় নদীগুলো এই পানি ধারণ করতে পারে না। তখন দুই পারের জনপদ, ফসলি
জমি ভাসিয়ে নেয়। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। আবার নদীগুলোর
ভরাটপ্রক্রিয়াও দ্রুততর হয় উজানে নদীর প্রকৃতিবিরুদ্ধ নানা কর্মকা-ের
কারণে। তা সত্ত্বেও ভাটির দেশ হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বন্যার
ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে নানা ধরনের উদ্যোগ আমাদের নিতেই হবে। এর মধ্যে
প্রধানতম উদ্যোগটি হচ্ছে খননের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা।
পাশাপাশি নদীর তীর রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। কাজগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও
টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের তা করতেই হবে।
বর্তমান সরকার বেশ
কিছু নদীতে খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। খননকাজে গতি আনতে বেশ কিছু ড্রেজার
সংগ্রহ করা হয়েছে। আরো কিছু ড্রেজার সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়া
আরো জোরদার করতে হবে। এর আগে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় দুর্গত মানুষকে রক্ষার
উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ভাঙনের
শিকার মানুষের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।