স্টাফরিপোর্টার।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুইটি বিভাগ দুইটি নদীর নামে করার
সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি পদ্মা ও একটি মেঘনা। ‘কু’ নামে বিভাগ হবে না।
কুমিল্লা নামের সাথে মুশতাকের নাম জড়িত। সেটা আমি দেবো না।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা মহানগর
আওয়ামীলীগের কার্যালয় উদ্বোধনকালে এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,
কুমিল্লা নামে হলে চাঁদপুর বলবে চাঁদপুর নামে হবে, নোয়াখালী বলবে নোয়াখালী
নামে হবে। কুমিল্লা ত্রিপুরার ভগ্নাংশ। তিনি বলেন, ফরিদপুর বিভাগ করা হবে
পদ্মা নামে আর কুমিল্লা বিভাগ করবো মেঘনা নামে। কারন পদ্মা মেঘনা যমুনা
তোমার আমার ঠিকানা। এই শ্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে বিজয় অর্জন
করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লা নামে অন্য জেলাগুলো চায় না। আমরা
চেষ্টা করেছি তো। নোয়াখালী আসবে না, ফেনী আসবে না, লক্ষীপুর আসবে না,
চাঁদপুর আসবে না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসবে না। তিনি বলেন, কুমিল্লা বিভাগ
‘মেঘনা’ নামে হবে- না হয় হবে না।
এ সময় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ
কার্যালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের
সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি, আওয়ামী লীগের চট্রগ্রাম বিভাগের
দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি,
ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এমপি, ডা. প্রাণগোপাল দত্ত এমপি, আবুল হাসেম খান
এমপি, নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল এমপি, আরমা দত্ত এমপি প্রমুখ উপস্থিত
ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশের
প্রতিটি জেলায় একটি করে আওয়ামীলীগ অফিস হোক। আওয়ামীলীগ এমন একটি সংগঠন যে
সংগঠন জাতির পিতা করে দিয়েছিলেন। যে সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন
করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়, মানুষের কল্যাণ হয়।
তিনি
বলেন, কুমিল্লায় যে ঘটনাটা ঘটে গেছে তা সত্যিই খুব দুঃখজনক। কারণ মানব
ধর্মকে সম্মান করা এটা ইসলামের শিক্ষা। নিজের ধর্মকে পালন করার অধিকার যেমন
সকলের আছে, তেমনি অন্যের ধর্মকে কেউ হেয় করতে পারে না। এটা ইসলাম শিক্ষা
দেয় না। নিজের ধর্মকে সম্মান করার সাথে সাথে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে
হবে। অন্যের ধর্মকে যদি হেয় করা হয় তাহলে নিজের ধর্মকেও হেয় করা হয়।
কুমিল্লার ঘটনাটা বিশ্লেষণ করে আমরা সেটাই দেখি পবিত্র কোরআন শরীফকে
অসম্মান করেছে অন্যের ধর্মকে অসম্মান করতে গিয়ে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে
দুঃখজনক। আমি এটাই বলবো, যার যার ধর্মের সম্মান নিজেদেরকেই রক্ষা করতে হবে।
আরেকটি কথা, আইন কেউ হাতে তুলে নেবে না। কেউ যদি অন্যায় করে, অপরাধীদের
বিচার হবে, আমাদের সরকার তার বিচার করবে। অপরাধী সে যেই হোক তার বিচার হবে।
আমাদের নবী করিম (সা:) বলেছেন, কেউ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। সুতরাং
আমাদেরকে সে কথাটা মেনে চলতে হবে। আমাদের অনুসরণ করতে হবে, আমাদের জানতে
হবে। তাহলেই আমাদের ইসলামের প্রতি সঠিক শিক্ষাটা পাবো। প্রত্যেকটা ধর্মই
শান্তির বাণীর কথা বলে । সকলেই শান্তি চায়। আমাদের বাংলাদেশে আমরা একটি
অসাম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি। সেখানে সকল ধর্মের সম্প্রীতি থাকবে।
সম্প্রীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। যুগ যুগ ধরেই সকল ধর্মের মানুষ আমরা
একাসাথে বসবাস করে আসছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন সেখানে
কিন্তু কেউ ধর্ম দেখে না। যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের রক্ত একাকার হয়ে মিশে
গেছে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ সকল ধর্মের, সকল বর্ণের। সকল
শ্রেণীপেশার মানুষ মর্যাদা নিয়ে চলবে। এটাই আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুজিব বর্ষ উদযাপন করছি, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি।
বাংলাদেশ
উন্নয়ণশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর সেই
মর্যাদাটা রক্ষা করেই উন্নয়ণের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর বিশেষ করে
কুমিল্লার ব্যাপক উন্নয়ণ হয়েছে। ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের
ঘোষণা দেয়া হয়। কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, জেলা রেজিষ্ট্রি ভবন, কবি
নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, জেলা সার্ভার স্টেশন,
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ২৫০ থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে, কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট আইসিইউ ভবন, সিভিল সার্জন অফিস নির্মান, একশ
শয্যা বিশিষ্ট ডায়বেটিস হাসপাতাল, ৪টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো
৫০শয্যায় উন্নীত করণ এবং ৭৬টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিকও নির্মান করা হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ডা. টি হোসেন হোস্টেল, অধ্যাপক ফিরোজা বেগম
হোস্টেল, শেখ রাসেল ছাত্রাবাস, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভবন, গোমতী
নদীর উপর টিক্কার চর সেতু নির্মান, গোমতী নদী ড্রেজিং, তিতাস নদী পুণঃখনন,
বিবির বাজার স্থল বন্দর সড়ক উন্নয়ণ, ৩টি ট্যাকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ
স্থাপন সম্পন্ন, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ৫ তলা ডরমেটরি নির্মান, কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, কুমিল্লা শহরের শাসন গাছায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মান,
গোমতী নদীর বাঁধে বাইপাস সড়ক উন্নয়ণ, ৩টি আরবান হেল্থ কেয়ার সেন্টার
নির্মান করা হয়েছে। কুমিল্লা সেনানিবাসে বীরশ্্েরষ্ঠ মোস্তফা কামাল গেট
থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত চার লেন মহাসড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়ণ কাজ সম্পন্ন
হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মান
করা হচ্ছে। সারা দেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মান করা
হচ্ছে। নতুন সড়ক নির্মান, রাস্তাঘাট ও পুলকালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত করা
হচ্ছে। তাছাড়া কুমিল্লা নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত কা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এটাই আমাদের
নীতি। এটাও মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে দেয়া হয়। কুমিল্লার জন্য সবচেয়ে বেশি
উন্নয়ণ কাজ আমরা করে দিয়েছি। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে
যাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেই এই দেশের মানুষের ভাগ্য
পরিবর্তন হয়। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায়
এসেছিলো তারা মানুষের জন্য কিছু করেনি।নিজেদের আখের গুছিয়েছে। কিন্তু
আওয়ামীলীগ গণমানুষের সংগঠন, আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবে।
এদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেবে। এদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরন করবে।
যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। এটা তার স্বপ্ন ছিলো যে বাংলাদেশ আর দরিদ্র
থাকবে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী
জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।