স্থানীয়
সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন বরাবরই অনেক বেশি
সংঘাতপূর্ণ হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনেও প্রাণহানি ঘটেছিল ১১০ জনের।
এ বছর প্রথম পর্যায়ে ২০৪টি ইউপির নির্বাচন হয়েছিল গত জুন মাসে। তখন তিনজন
নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন। করোনার কারণে প্রথম পর্যায়ের স্থগিত ১৬০টি
ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত মাসে। সে সময়ও তিনজন নিহত এবং অনেকে আহত
হয়েছেন। আগামী ১১ নভেম্বর ৬৩ জেলায় অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি
নির্বাচন। চলছে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রচার-প্রচারণা। অথচ এরই মধ্যে প্রাণ
গেছে পাঁচজনের। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিত্মরম ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত
প্রার্থী নেথোয়াই মারমাকে হত্যা করেছে দুষ্কৃতরা। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার
লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১০ জন। মাগুরা সদরের
জগদল ইউপির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন চারজন। এ ছাড়া
প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থান থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
অথচ
এ বছর নির্বাচনে সহিংসতা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাড়তি কোনো উদ্যোগ
দেখা যাচ্ছে না। আগের কমিশনগুলো নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার
বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি
অনুযায়ী কর্মকৌশল গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমান কমিশন তেমন কোনো বৈঠকও করেনি।
এমনকি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। কমিশন পুরোপুরি নির্ভর করে আছে
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের ওপর।
একে তো এ বছর নির্বাচন হচ্ছে করোনা
মহামারির মধ্যে। প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক মানুষের মধ্যে
এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। তার ওপর নির্বাচনে বেশির ভাগ প্রার্থীই এসেছে
ক্ষমতাসীন দল থেকে হয় মনোনয়ন নিয়ে, না হয় বিদ্রোহী হয়ে। এসব কারণে
নির্বাচনে এবার উৎসবের আমেজ কম। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কম
থাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক দুর্বৃত্তপনার আশঙ্কা বেশি থাকছে। বিশেষজ্ঞরা মনে
করছেন, এ বছর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আরো অনেক বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। অথচ
নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি পুরোপুরি স্থানীয় প্রশাসনের ওপর ছেড়ে
দিয়ে এতটা নিশ্চিন্ত হলো কিভাবে তা অনেকেরই বোধগম্য নয়। অবশ্য প্রধান
নির্বাচন কমিশনারসহ কয়েকজন কমিশনার বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। তাঁরা সেসব
জেলায় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে
প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে।
ইউনিয়ন
পরিষদের নির্বাচনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ খুব বেশি থাকে। এই
নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে তাঁদের খুব কাছের মানুষ
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার লড়াইটাও অনেক তীব্র
হয়। এসব কারণে সংঘর্ষের ঘটনাও বেশি ঘটে। আমরা আশা করি, পরিস্থিতি বিবেচনায়
নিয়ে বাকি নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে ইসি আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা নেবে।