পেঁয়াজ মজুত করে মাথায় হাত পাইকারদের
Published : Tuesday, 26 October, 2021 at 12:00 AM
গেলো শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ছয় দিন আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকার সুযোগে দাম বাড়তে পারে আশায় পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন পাইকাররা। কিন্তু পূজার বন্ধে চাহিদা না থাকায় দাম বাড়ার পরিবর্তে কমে যায়। একইভাবে কয়েকদিন মজুত করে রাখায় অতিরিক্ত গরমে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। ৪৮ টাকা কেজির পেঁয়াজ মজুত করে ৩৫-৩৬ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে অনেক পাইকার পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূজার বন্ধের আগের দিন ১০ অক্টোবর ৩৭ ট্রাকে এক হাজার ১৪৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। এর মধ্যে ৪০০ টন দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হলেও বেশিরভাগ বন্দরের আমদানিকারকদের গুদামে মজুত রাখা হয়। অনেক পাইকার আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে নিজস্ব গুদামে রাখেন। পূজার বন্ধের পর ১৭ অক্টোবর থেকে পুনরায় আমদানি শুরু হয়। কিন্তু দেশের বাজারে চাহিদা না থাকায় গুদামের পেঁয়াজ নামিয়ে রাখতে হয়। মজুতকৃত অনেক পেঁয়াজ এখন দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এখনও বিভিন্ন আমদানিকারক ও পাইকারদের ঘরে ২০০-২৫০ টন মজুত আছে।
স্থলবন্দরের পাইকার পলাশ হোসেন বলেন, দুর্গাপূজার বন্ধের আগে দেশের বিভিন্ন মোকামের বাজারগুলোতে পেঁয়াজের প্রচুর চাহিদা ছিল। বাড়তি চাহিদা ঘিরে পূজার বন্ধের মধ্যে আমদানিকারকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে মজুত করেছিলাম। যেহেতু পূজার বন্ধে ছয় দিন বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকবে সে জন্য ১৫ টন পেঁয়াজ মজুত করেছিলাম। কিন্তু আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকলেও চাহিদা ছিল না। বন্ধের পর বন্দর দিয়ে আবার আমদানি শুরু হয়। বন্ধের আগে যে পেঁয়াজের কেজি ৪৭-৪৮ টাকা ছিল তা এখন ৩৫-৩৬। সেই সঙ্গে গরমে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি যে ১৫ টন মজুত করেছিলাম তাতে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
পেঁয়াজের পাইকার শরিফুল ইসলাম বলেন, পূজার বন্ধের আগে দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। আমদানিকৃত পেঁয়াজগুলো বিভিন্ন মোকামে মজুত আছে। বেচাকেনা একেবারেই নেই। গরমে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা ৪৮ টাকা কেজিতে যে পেঁয়াজ কিনেছিলাম তা এখন ৩৫-৩৬ টাকা বিক্রি করছি। এতে কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে। পুঁজি থাকবে না।
আরেক পাইকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, লাভের আশায় পেঁয়াজ মজুত করেছিলাম। কিন্তু সেই আশা শেষ। বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কমায় ও বার্মা থেকে আমদানি হওয়ায় চাহিদা কমায় দাম কমেছে। ৪৮-৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনে ৩৫ টাকা বিক্রি করছি। হঠাৎ দাম এভাবে কমে যাবে ভাবতে পারিনি।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বাজার তদারকির যে কমিটি করা আছে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করবো, কেউ যদি বেআইনিভাবে পেঁয়াজ মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল করতে চায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মাহফুজার রহমান বলেন, কিছু অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুত করেন। পূজা-ঈদসহ কোনও কারণে যখনই আমদানি-রফতানি বন্ধ হওয়ার খবর পান তখনই পেঁয়াজ মজুত করেন তারা। একইভাবে মোকামগুলোতে যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তারাও পেঁয়াজ রেখে দেন। এবার পূজার বন্ধে ছয় দিন আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। তারা চাহিদামতো পেঁয়াজ কিনে মজুত করেছেন। কিন্তু চাহিদা না থাকায় দাম কমেছে। ফলে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।