মোবাইল প্রযুক্তির প্রসারের কারণে সারাদেশে পৌঁছে গেছে ফোরজি। গতি বেশি হওয়ায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা এখন সেদিকে ঝুঁকছেন। ফলে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে থ্রিজি নেটওয়ার্ক।
খোদ মোবাইল ফোন অপারটেররাও ফোরজিতেই আশা দেখছেন। ২০১২ সালে থ্রিজি চালু হলেও ফোরজি-কে টপকে যেতে পারেনি। ২০১৮ সালে ফোরজি চালুর পরে এখন পর্যন্ত এর ব্যবহারকারী ২৮ শতাংশের বেশি। আর থ্রিজি ব্যবহারকারী ২৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, থ্রিজির চেয়ে ফোরজি দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। ফলে আমরা থ্রিজি আর রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। আমরা চাই লোকজন ফোরজি ব্যবহার করুক। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আগামীতে টুজি ও ফোরজিই থাকবে। ফোরজির বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের কোণে কোণে ফোরজি পৌঁছে গেছে। এর গতিও বেশি। বাজারে ফোরজি সেটের প্রতুলতা রয়েছে। ফলে কম গতির থ্রিজি থাকার কোনও প্রয়োজনীয়তা দেখছি না।
মন্ত্রী আরও বলেন, গত তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) নিলামে টেক নিউট্রালিটি দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই তরঙ্গে সব ব্যান্ডেই সেবা দেওয়া যাবে। সে কারণে থ্রিজি ব্যান্ডের স্পেক্ট্রাম আর দরকার হবে না। সব মিলিয়েই আমাদের মনে হয়েছে থ্রিজি থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।
এ বিষয়ে একটি মোবাইল ফোনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে ফোরজিতেই মূল ব্যবসা হবে। ফোরজি পেলে গ্রাহক কেন থ্রিজি নেবে—প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি জানান, দেশের প্রায় সব জায়গায় পৌঁছে গেছে ফোরজি। ফাইভজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফোরজিই তো লোকজন ব্যবহার করতে পারছে না। হ্যান্ডসেটের দাম বেশি। ফাইভজির অনেক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) কিনতে হবে। বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন। ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন প্রয়োজন। এই ফোনের দামও বেশি হবে। ফলে কত সংখ্যক মানুষ এই ফোন ব্যবহার করবে তার ওপর সাফল্য নির্ভর করছে।
মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বিএমপিআইএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারের সংখ্যা মোট ব্যবহারকারীর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। যদিও অনেকে এই সংখ্যাটা কিছুটা বেশি বলে উল্লেখ করেন। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহউদ্দিন বলেন, এখন দেশে যেসব স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে তার সবই প্রায় ফোরজি সাপোর্ট করে। ফলে সেট কিনে চালু করলেই গ্রাহক ফোরজি পাচ্ছেন। গ্রাহক ফোরজি পেলে কেন থ্রিজিতে যাবেন? তবে যেখানে ফোরজি নেটওয়ার্ক নেই সেখানে থ্রিজিই ভরসা।
দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৪১ শতাংশ!
গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত জিএসএমএ (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৪১ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়,বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ টুজি, ২৫ শতাংশ থ্রিজি ও ২৮ শতাংশ ব্যবহারকারী ফোরজি ব্যবহার করেন।
প্রায় সব মোবাইল টাওয়ারই ফোরজি
গত মার্চ মাসে গ্রামীণফোন ও রবি ঘোষণা দেয় তাদের সব মোবাইল টাওয়ার ফোরজি সেবার আওতায় আনা হয়েছে। অপরদিকে বাংলালিংক সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে তাদের ফোরজি কাভারেজ ৯৫ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক সবার শেষে ফোর-জি সেবাদান শুরু করেছে। তাদের কাভারেজ এখনও অন্যান্য অপারেটরের মতো নয়।