বিশ্বব্যাপী
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে চলায়
ক্রমেই বেশি করে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং
অনেক দেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলসহ বহু দ্বীপদেশ ক্রমে তলিয়ে যাচ্ছে। বহু
মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের ওপরও জলবায়ু পরিবর্তন
মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতেই পৃথিবীজুড়ে এক
ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, যা মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই
বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ অভিঘাত মোকাবেলায় অতি দ্রুত পৃথিবীর
তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বলছেন। রাজনৈতিক নেতারাও এর
প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করছেন, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অবদান রাখছেন না।
কপ-২৬ সম্মেলনের আগে ১২০টি দেশ জাতিসংঘে তাদের যে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড
কনট্রিবিউশন (এনডিসি) জমা দিয়েছে, তাতে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে তাপমাত্রা কমানোর
জন্য যতটুকু অবদান রাখা প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক কম অঙ্গীকার রয়েছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা বা ইউনেপ বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ
তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার জন্য যেখানে প্রয়োজন
ছিল কার্বন নিঃসরণ ৫৫ শতাংশ কমানো, সেখানে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে মাত্র
৭.৫ শতাংশ কমানোর।
পৃথিবীর জলবায়ু মানবজাতির বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য
১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রটোকলের মাধ্যমে বেশ কিছু করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছিল।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ-২১ সম্মেলনে জাতিসংঘের
সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখা হবে এবং তা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার
চেষ্টা করা হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি, বরং পৃথিবীর তাপমাত্রা আরো বেশি
হারে বেড়ে চলেছে। ইউনেপ রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান প্রবণতায় পৃথিবীর
তাপমাত্রা বৃদ্ধির গতি ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে যাবে। এর পরিণতি হবে
ভয়াবহ। বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে অতি নিম্ন লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করেছে, বিশ্ব গণমাধ্যমে তার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু
রাজনৈতিক নেতারা দৃশ্যত তার সামান্যই পরোয়া করছেন। তাঁরা নিজেদের অর্থনৈতিক
স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কপ-২৬ সম্মেলনে যাতে কঠিন
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত না হয়, সে জন্য প্রধান জ্বালানি তেল ও কয়লা
উৎপাদনকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নানা রকম লবি চলেছে। একইভাবে যেসব
দেশে তেল ও কয়লার অত্যধিক ব্যবহার রয়েছে, তারাও চাচ্ছে না দ্রুত এসবের
ব্যবহার কমিয়ে আনার কঠোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হোক।
বিজ্ঞানীরা বলছেন,
তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে
কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে
হবে। মানবজাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বনেতাদের তা মেনে নিতে হবে। একই সঙ্গে
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতার যে লক্ষ্য প্যারিস সম্মেলনে নির্ধারিত
হয়েছিল, সেটিও পূরণ করতে হবে। সবুজ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় ও প্রযুক্তি
হস্তান্তরে বিশ্বকে আরো উদার হতে হবে।