সিলেট নগরের জিন্দাবাজারে ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্ট সিলগালাসহ আরও দুটি রেস্তোরাঁয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকরা। বুধবার (৩ নভেম্বর) সকাল থেকে সিলেটের সব রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে হাউজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকরা। এসময় জিন্দাবাজার সড়কের চারপাশের সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। প্রশাসনের আশ্বাসে পৌনে ৬টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যান মালিক-শ্রমিকরা।
এর আগে দুপুরে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জিন্দাবাজার এলাকার ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টকে সিলগালা এবং পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্টে রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মচারীরা মিলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। রেস্তোরাঁয় অভিযান বন্ধ, সিলগালা করা রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়া এবং আটক কর্মচারীদের মুক্তির দাবি জানান তারা। এসময় তারা স্লোগান দেন ‘ভোজনবাড়ি বন্ধ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই গ্রেফতার কেন, প্রশাসন জবাব চাই’।
সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শান্ত দেব জানান, র্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরের জিন্দাবাজারের ভোজনবাড়ি, পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টে অভিযান চালান। এসময় ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে ম্যানেজার ও সুপারভাইজারকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে ৮০ হাজার টাকা করে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, লকডাউন পরবর্তী সময়ে এখনো রেস্তোরাঁ ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাট ও ট্যাক্সের বোঝা। রেস্তোরাঁ ব্যবসা যখন ধুঁকছে তখন অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।’
‘কোনো রেস্তোরাঁয় সমস্যা থাকলে জরিমানা হতে পারে। কিন্তু সিলগালা করার বিধান নেই। এতে বোঝা যায়, রেস্তোরাঁ মালিকদের হয়রানি করতে এরকম অভিযান করা হচ্ছে’—যোগ করেন শান্ত দেব।
এর আগে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হলরুমে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট চেম্বারের সভাপতি এটিএম শোয়েব এবং সিলেট রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ও সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায়ও বুধবার থেকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে অভিযান শেষে র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, ভোক্তাদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রেস্তোরাঁটি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এর আগে একাধিকবার রেস্তোরাঁটি অভিযান চালালেও কোনো কাজ হয়নি। এছাড়া পানসি ও পাঁচভাই রেস্টুরেন্টে পচা-বাসি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পাওয়া গেছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু আরও বলেন, রেস্তোরাঁয় অভিযানের সময় এমন অনেক খাদ্য পাওয়া গেছে যেগুলো দুই থেকে তিন দিন আগের। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন নেই। খাবার পরিবেশনের বৈধ কাগজপত্রও নেই। সবকিছু মিলে আমরা সাময়িক সময়ের জন্য রেস্তোরাঁটি বন্ধ করে সিলগালা করে তাদের সময় দিয়েছি।
সূত্র: জাগো নিউজ