নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা ভূঁইয়া বাড়ির রিকশাচালক
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার ছেলে আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না (২৩)। তার মা ঝর্ণা
বেগম মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। ছোটবেলা থেকেই মুন্না কুমিল্লা নগরীর
বিভিন্ন মানুষের আশ্রয়ে বড় হয়েছেন। বাবার সঙ্গে তার সর্ম্পক নেই। সর্বশেষ
কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় একটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী
ছিলেন তিনি। এ পরিচয়ের আঁড়ালে বড় পরিচয় হলো- মুন্না একজন সিরিয়াল কিলার।
মুন্নার নেশা ছিলো নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর হত্যা করা । এরই
মধ্যে মুন্নার হাতে দুই নারী খুন হওয়ার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো
অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা। এ দু’টো হত্যার ঘটনা ছিলো একেবারেই
ক্লু-লেস।
পিবিআইয়ের সদস্যরা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা
মামলায় মুন্নাকে গ্রেপ্তারের পর অপর হত্যাকাণ্ডের তথ্য পায় তার কাছ থেকে।
মুন্নার সহযোগী দ্বীন ইসলাম দ্বীনু (১৯) মাইক্রোবাস চালক। তার গাড়িতে করেই
ওই নারীদের লাশগুলো ফেলা হয়েছে। তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। দ্বীনু
কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে।
হত্যাকাণ্ডের
শিকার ওই নারীরা হলেন, জেলার দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের
মেয়ে পান্না আক্তার (২৮) ও কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী গ্রামের সফিকুল
ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা (২৬)। দুই সন্তানের জননী পান্না আক্তারকে
হত্যা করা হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর। আর এক সন্তানের জননী লাইলীকে হত্যা করা
হয়েছে গত ২ সেপ্টেম্বর।
মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা পিবিআই
কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন পুলিশ
সুপার মো.মিজানুর রহমান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ
সোহেল, মামলা দু’টির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক
মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ, পুলিশ পরিদর্শক বিপুল চন্দ্র দেবনাথসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান বলেন, পান্না আক্তারের হত্যার ঘটনায় গত ২৫
অক্টোবর
সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধ হত্যা মামলা হলে আমরা
মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করি। পরবর্তীতে আমাদের পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ
কুমার মজুমদার স্যারের নির্দেশনায় মামলাটি সউদ্যোগে গ্রহণ করি। এরপর
তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩১ অক্টোবর নগরীর রেইসকোস এলাকা থেকে সিরিয়াল
কিলার মুন্নাকে গ্রেপ্তার করি। তার তথ্যে
একই দিন রাতে গ্রেপ্তার করি
তার সহযোগী দ্বীনুকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জনই হত্যাকাণ্ডের কথা
স্বীকার করে। এরপর আমরা মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমার
মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র খুঁজে পাই। লাইলীর পরিবার তাঁর নিখোঁজের ঘটনায়
একটি অপহরণ মামলা করেছিলো আদালতে, সেটি আমরা তদন্ত করছি। আর লাশ উদ্ধারের
ঘটনায় ফেনী সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা করেছে
পুলিশ। এরপর কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে
মুন্না দু’টো হত্যাকাণ্ডের কথাই স্বীকার করেছে। সোমবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারা দু’জনই।
মো.মিজানুর
রহমান আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানিয়েছে ওই নারীদের সঙ্গে প্রথমে
মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেল তিনি। এরপর তাদেরকে বিয়ের প্রলোভনে
ডেকে এনে প্রথম ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর
বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতেন মহাসড়কের পাশে। দ্বীনুর মাইক্রোবাসে করে পান্নার
লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার গোপিনাথপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। আর লাইলীর লাশ ফেনী সদরের
শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।
তিনি
বলেন, প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা নাম নেশায় পরিণত হচ্ছিলো।
সে একজন সিরিয়াল কিলার। এ দু’জন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কি-না
আমরা সকল স্থানে তা যাচাই করে দেখছি। আমরা তার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে
কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতো সে। তার সঙ্গে আরও অন্তত
তিনজন নারীর একইভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা
ছিলো মুন্নার পরবর্তী টার্গেট।