অবশেষে
জাতীয় ক্রিকেট দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শূন্য হাতে ফিরে এলো।
নির্বাচনী অংশে দুর্বল দুটি দলকে হারানোই আমাদের একমাত্র প্রাপ্তি। পাপুয়া
নিউগিনি ও ওমানের বিরুদ্ধে জয় একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্য কোনো প্রাপ্তি
নয়। প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে হারটাকেই বরং অঘটন ভাবতে হবে। সুপার
টুয়েলভে কোনো মতে উঠলেও এর প্রত্যেকটি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। যে পাঁচটি
ম্যাচ খেলেছে এই পর্বে তার মধ্যে মাত্র দুটিতে একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে
পেরেছিল, হয়তো খেলোয়াড়রা আত্মবিশ্বাসী থাকলে এ দুটোতে জেতাও অসম্ভব ছিল না।
শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলা দুটি ম্যাচ ছাড়া বাকি তিনটি ছিল
উত্তরোত্তর লজ্জাজনক হারের প্রদর্শনী। পুরো টুর্নামেন্ট মিলে বাংলাদেশ
দলের অর্ধশতক আছে মাত্র দুটি। একমাত্র ইতিবাচক প্রাপ্তি বোধহয় ফাস্ট বোলার
তাসকিন। সে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছে এবং গতির ঝড় তুলে ব্যক্তিগত
পারফরম্যান্স দেখাতে পেরেছে।
এখন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা সবাই বলছেন,
বাংলাদেশের প্রস্তুতি ঠিক হয়নি। সবাই জানেন বাংলাদেশ দল ক্রিকেটের এই
ফরম্যাটে দুর্বল। তার ওপর এই টুর্নামেন্টের আগে দেশের মাটিতে স্লো টার্নিং
উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে ভ্রান্ত
আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্ব পর্যায়ে খেলতে যাওয়াও ছিল বোকামি। এর ফলে বিশ্ব
র্যাংকিংয়ে ছয়ে উঠে আসা যে ছিল আদতে মেকি ভাবমূর্তি, ফুটো হয়ে বেরিয়ে এলো
সেই লজ্জাজনক বাস্তবতা। বলা যায় তাসকিন, নাঈম এবং মেহেদি ছাড়া কেউই ফর্মে
ছিল না। সাকিব ও মোস্তাফিজ আইপিএল খেললেও তাদের কাছ থেকে টি-টোয়েন্টির কোনো
প্রদর্শনী দেখা যায়নি।
টি-টোয়েন্টি হলো পাওয়ার গেম, শক্তির খেলা,
ব্যাটসম্যানদের চার-ছক্কা মারার ক্ষমতার ওপর এটা নির্ভর করে। বোলারদের কাছ
থেকে চাই ডট বল আদায়ের দক্ষতা। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এসব দক্ষতা খুবই কম।
আমাদের মনে হয় বিশ্বব্যাপী টি-টোয়েন্টির যে জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যেভাবে দেশে
দেশে ফ্রেঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের চল শুরু হয়েছে তাতে একে উপেক্ষা করাও যাবে
না। তাই এর জন্য আলাদাভাবে একটি দল গঠন করতে হবে, প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা,
দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। এদিক থেকে বর্তমান বোর্ডসহ ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে
দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ব্যক্তিদের এবার সরানোর কথা ভাবা উচিত। তাদের কল্যাণে
প্রায় একই দল তিন ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলে বলে একটা মাধ্যমে খারাপ করলে তার
প্রভাব দেশের পুরো ক্রিকেট জগতেই পড়ছে। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর
একমাত্র পথ হলো ভালো খেলা, জয় পাওয়া। তার জন্য দরকার ক্রিকেট বোর্ড ও
খেলোয়াড়দের বড় ঝাঁকুনি দেওয়া। আর চাই নিয়মিত বিভিন্ন বয়সভিত্তিক
টুর্নামেন্টের আয়োজন। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে পাতানো খেলার
জঘন্য অভ্যাস থেকেও দেশের ক্রিকেটকে উদ্ধার করতে হবে। বাংলাদেশে ক্রিকেট
যেহেতু সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা তাই এ বিষয়ে সরকারের ওপর মহলেরও নজর দিতে হবে।