এস এন ইউসুফ ||
কুমিল্লার
গণমানুষের নেতা ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ অধ্যক্ষ আফজল খান বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক
জীবনের অধিকারী ছিলেন। ষাটের দশকের কুমিল্লা অঞ্চলের তুখোর ছাত্রনেতা
বর্তমানে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনের সর্বজন শ্রদ্বেয় ছিলেন রাজনৈতিক নেতা
অধ্যক্ষ আফজল খান এডভোকেট। যিনি তার সৃষ্টিশীলতা, কার্যকৌশলতা, উদার মানবিক
মূল্যবোধের চর্চা ও প্রয়োগের মাধ্যমে একজন নিবেদিত সমাজসেবক, একনিষ্ঠ
শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন। একটি কথা
স্পষ্ট যে কুমিল্লা অঞ্চলে অধ্যক্ষ আফজল খান জনসাধারনের মাঝে এক নামে
অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষাবিদ হিসেবে ইতিমধ্যে
সর্বজন শ্রদ্বেয়, যা শুধুমাত্র কুমিল্লা নয় তথা পুরো দেশবাসীর নিকটও
স্বীকৃত। কারণ কুমিল্লা অঞ্চলে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর পর এতো শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান কেউ গড়তে পারেনি। একটি কথা স্পষ্ট আফজল খানের হাতেগড়া শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান গুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন কুমিল্লার লক্ষ লক্ষ সন্তানকে শিক্ষার আলোয়
আলোকিত করতে।
কুমিল্লা শহরের ঠাকুরপাড়া এলাকায় স্বনামধ্যন্য এক মুসলিম
পরিবারে জন্ম আফজল খানের। পিতা মরহুম মোঃ ছাদেক আলী খান ছিলেন একজন
ধার্মিক পরহেজগার মানুষ, মাতা মরহুমা সাজেদা খানম ছিলেন একজন গৃহিনী,
রামমালা রোডের পৈত্রিক বাড়িতেই ১৯৪৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন।
পারিবারিক গন্ডিতেই ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন আফজল খান।
পরবর্তীতে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ
থেকে ছাত্রজীবনের পথচলা। ছাত্রজীবন থেকেই আফজল খানের তেজদ্রীপ্ত চলাচল
কুমিল্লার লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে অনুপ্রাণিত করেছে কুমিল্লার বিভিন্ন আন্দোলন
সংগ্রামের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে। ১৯৬৫-৬৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের
ভিপি ৬০ এর দশকের জেলা ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা
আন্দোলন ও ৬৯ এর গণঅভ্যুথান সহ ৭০ এর নিার্বচনে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায়
সক্রিয় নেতৃত্বে দান করে আফজল খান। এমন বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বের কারণে ধীরে
ধীরে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন একজন সাহসী নেতা হিসেবে।
রাজনৈতিক কর্মকান্ড আর আন্দোলন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া আফজল খানকে
অসংখ্যবার কারা বরণ করতে হয়েছে কুমিল্লার মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে।
কুমিল্লা ছাত্রজনতার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর নিকটও নির্মম
নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে বারংবার। অসংখ্য নির্যাতন আর নিপীড়ন আফজল
খানকে শিক্ষা জিবন থেকে জড়ে পড়তে দেয়নি। শিক্ষা জিবনে বি এ, বি এড ও এল এল
বি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন পরিচ্ছন্ন মেধার কারণে।
পরবর্তীতে কুমিল্লার
রাজনৈতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুমিল্লা শহর এবং কোতয়ালী থানা আওয়ামীলীগের
সাবেক সভাপতি হিসেবে। সাবেক শ্রম সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন
কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের। এবং নিবার্চিত সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন কুমিল্লা
দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের ছিলেন যুগ্ম আহবায়ক। বর্তমানে ১৪দলীয় মহাজোটের
সমন্বয়ক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করে করেছেন নিষ্ঠার
সাথে।
মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকার ক্ষেত্রে আফজল খানের ভূমিকা ছিলো অগ্রভাগে
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে
হাতিমারা ইয়ূথ ক্যাম্প চীফ হিসেবে দায়িত্ব পান, মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয়
অংশফগ্রহণ এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে বীর
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাপ্ত। আফজল খান কুমিল্লার মানুষের জন্য
সমাজের জন্য যেসব অবদান রেখেছেন তার তুলনামূলক চিত্র হলো সাবেক ভাইস
চেয়ারম্যান স্বাধীনতার পর প্রথম নির্বাচিত কুমিল্লা পৌরসভার মেয়র ছিলেন,
সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ সমবায় ইউনিয়নের। পরিচালক ছিলেন
ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই)। চেয়ারম্যান
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার, বার বার নির্বাচিত
সভাপতি ছিলেন কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির, কুমিল্লা জেলা
ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন,
কুমিল্লা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন বার বার,
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পান আফজল খান,
ল্যান্ড মরগেজ ব্যাংকএর কুমিল্লার চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক
লিঃ এর নির্বাচিত সভাপতিও ছিলেন বার বার, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির
কেন্দ্রেীয় কমিটির পরিচালক ও কুমিল্লা জেলা চেয়ারম্যান ও দৈনিক ময়নামতির
পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আফজল খান যে
কারনে কুমিল্লার মানুষের নিকট শ্রদ্বেয় তা হলো আফজল খান কুমিল্লাকে আলোকিত
করতে নিজ অর্থে গড়েছেন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আফজল খান প্রতিষ্ঠা করেন
কুমিল্লা বঙ্গবন্ধু ‘ল’ কলেজ। প্রতিষ্ঠা করেন কুমিল্লার লক্ষ লক্ষ
ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণের ঠিকানা কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুল। প্রতিষ্ঠা করেন
অজপাড়া গাঁয়ে জালুয়া পাড়া আফজল খান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। কুমিল্লার
সন্তানদের কারিগরি শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে শহরের দৌলতপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠা
করেছেন আফজল কারিগরী ও বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয় যা চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রথম
সারির একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠা করেছেন গহিনগ্রামের হতদরিদ্রদের
সন্তানদের শিক্ষিত করতে কালির বাজার নার্গিস আফজল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
একই এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন কালির বাজার নার্গিস আফজল কারিগরী ও কমার্স
কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন কালির বাজার নার্গিস আফজল কিন্ডার গার্ডেন।
প্রতিষ্ঠা করেছেন জারখন্ড আফজল খান সাইন কিন্ডার গার্ডেন। শহরের ঠাকুরপাড়া
এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার রত্নগর্ভা মা ও বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছার নামে শেখ
ফজিলাতুন্নেছা কারিগরী কলেজ, একই স্থানে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মডার্ন
হাইস্কুল। প্রতিষ্ঠা করেছেন ছাদেকিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা যা নগরীর
গোবিন্দপুর এলাকায় অবস্থিত। নগরীর গোবিন্দপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন
গোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন চাঁন খা
জামে মসজিদ সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিচলানার দায়িত্বে
রয়েছেন সহ সভাপতি, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সহ-সভাপতি শাকতলা উচ্চ
বিদ্যালয়। সম্পাদক কুমিল্লা মডার্ণ স্কুল।
আফজল খান তার নিজের যোগ্যতায় নিজেকে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও একজন সম্মানিত মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন অর্জন করেছেন সম্মাননা ।
সার্ক
চেম্বারের প্রতিনিধি হিসাবে ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের বিভিন্ন
সেমিনারে যোগদান করেছেন অসংখ্যবার। এফ বি সি আই এর প্রতিনিধি হিসাবে ১৯৮৮
সালে জেদ্দায় ইসলামিক চেম্বারের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেন। সমবায়ের
প্রতিনিধি হিসাবে ১৯৯৪ সালে জাপানে আন্তর্জাতিক সমবায়ী সম্মেলনে অংশগ্রহণ,
এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মেলায়
অংশগ্রহণ আফজল খানের ছিলো প্রতি বছরের যোগদান। নিজেকে তেমন কোন মানুষ না
মনে করলেও জাতীয় ভাবে সম্মানিত হয়েছেন অনেক বার অর্জন করেছেন জাতীয়
পুরষ্কারও। সমবায় আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক
শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসাবে স্বর্ণপদক লাভ করেন। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক
জাতীয় বৃক্ষ রোপনে স্বর্ণ পদক লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক। সর্বশেষ কর
অব্জল কুমিল্লা কর্তৃক “কর বাহাদুর” হিসেবে পুরষ্কৃত হন।