Published : Wednesday, 17 November, 2021 at 12:00 AM, Update: 17.11.2021 1:16:07 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার বর্ষীয়ান আওয়ামী
লীগ নেতা, জেলা চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা
অধ্যক্ষ আফজলখান এডভোকেট আর নেই। মঙ্গলবার বেলা আড়াউটায় ঢাকার এ এম জেড
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি
রাজিউন। মৃত্যুকালেতারবয়সহয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে
রেখে গেছেন।
কুমিল্লা অঞ্চলের নেতা হলেও জাতীয়ভাবে নানা কারনে আলোচিত এ
নেতা ১৯৪৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা শহরের রামমালা রোডস্থ পৈত্রিক
বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।
বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ আন্দোলন এবং
একাত্তুরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অনশিকার্য। ১৯৬৫ সালে তিনি
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারনে আফজল খান
অনেকবার কারা বরন করেন এবং নির্যাতন ভোগ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক
অধ্যক্ষ আফজল খান হাতিমারা কামাল নগর ক্যাম্পের কমাণ্ডারের দায়িত্ব পালন
করেন। আফজল খান রাজনৈতিক জীবনে কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও
সভাপতি ছিলেন। ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। পরবর্তীতে তিনি
জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক হন। ছিলেন কুমিল্লা জেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক।
কুমিল্লায় আওয়ামীলীগের গ্রুপিংয়ের কারণে তিনি জাতীয়ভাবেও আলোচিত ছিলেন।
অধ্যক্ষ
আফজল খানের মৃত্যুতে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বর্ষিয়ান এই নেতা মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ইতিহাসের যবানিকা হলো।
বুধবার বাদ জোহর কুমিল্লা টাউনহল মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জানা
গেছে, সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে অধ্যক্ষ আফজল খানকে কুমিল্লার সিডি
প্যাথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গত ২৮ অক্টোবর
চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল। সেখানে কিছুটা সুস্থ হয়ে
উঠার পর তাকে কুমিল্লার বাসায় আনা হয়। এরপর আবার অসুস্থ হলে তাঁকে নেয়া হয়
কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে। সেখানে করোনা টেস্ট করার পর পজেটিভ আসে। ওই
রাতেই আফজল খানকে করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল রাজধানীর মধ্য বাড্ডার এ এম
জেড হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর নেয়া হয়
এইচডিইউতে। পরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার
দিকে মারা যান কুমিল্লার গণমানুষের নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান।
কুমিল্লা
শহরের ঠাকুরপাড়া এলাকায় স্বনামধ্যন্য এক মুসলিম পরিবারে জন্ম আফজল খানের।
পিতা মরহুম মোঃ ছাদেক আলী খান ছিলেন একজন ধার্মিক পরহেজগার মানুষ, মাতা
মরহুমা সাজেদা খানম ছিলেন একজন গৃহিনী, রামমালা রোডের পৈত্রিক বাড়িতেই ১৯৪৫
সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। পারিবারিক গন্ডিতেই ধর্মীয় শিক্ষা ও
প্রথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন আফজল খান। পরবর্তীতে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী
বিদ্যপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ থেকে ছাত্রজীবনের পথচলা।
ছাত্রজীবন থেকেই আফজল খানের তেজদ্রীপ্ত চলাচল কুমিল্লার লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে
অনুপ্রাণিত করেছে কুমিল্লার বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রে এগিয়ে
নিতে। ১৯৬৫-৬৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভি.পি ৬০ এর দশকের জেলা
ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন ও ৬৯ এর
গণঅভ্যুথান সহ ৭০ এর নিার্বচনে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় সক্রিয় নেতৃত্বে দান
করে আফজল খান। এমন বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বের কারণে ধীরে ধীরে লক্ষ লক্ষ
মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন একজন সাহসী নেতা হিসেবে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড
আর আন্দোলন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া আফজল খানকে অসংখ্যবার কারা বরণ করতে
হয়েছে কুমিল্লার মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে। কুমিল্লা ছাত্রজনতার পক্ষে
কথা বলতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর নিকটও নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে
বারংবার। অসংখ্য নির্যাতন আর নিপীড়ন আফজল খানকে শিক্ষা জিবন থেকে জড়ে পড়তে
দেয়নি। শিক্ষা জিবনে বি এ, বি এড ও এল এল বি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন
পরিচ্ছন্ন মেধার কারণে।
পরবর্তীতে কুমিল্লার রাজনৈতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন
কুমিল্লা শহর এবং কোতয়ালী থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে। সাবেক
শ্রম সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের। এবং
নিবার্চিত সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের ছিলেন
যুগ্ম আহবায়ক। বর্তমানে ১৪দলীয় মহাজোটের সমন্বয়ক হিসেবে জননেত্রী শেখ
হাসিনার নির্দেশে কাজ করে করেছেন নিষ্ঠার সাথে।