এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
কুমিল্লার
দেবীদ্বারে নিখোঁজের সাতদিন পর ৫ বছরের শিশু ফাহিমা হত্যাকান্ডে জড়িত
থাকার অভিযোগে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)’র অভিযানে
আটক ঘাতক পিতা আমির হোসেনসহ পাঁচজনকে দেবীদ্বার থানায় হস্তান্তর করেছে।
বুধবার
রাতে দেবীদ্বার থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করার পরই কণ্যা হত্যার দায়ে
ঘাতক স্বামী মোঃ আমির হোসেনসহ আটক ৫জনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায়
মামলা দায়ের করেছেন নিহত ফাহিমার মা হোছনা আক্তার।
নিহত ফাহিমার মা
হোছনা আক্তার’র দায়ের করা মামলার আসামীরা হলেন, দেবীদ্বার পৌর এলাকার
চাপানগর গ্রামের মোঃ জহীরুল ইসলাম’র পুত্র ভিক্টিম ফাহিমার পিতা এবং বাদীর
স্বামী ট্রাক্টর চালক মোঃ আমির হোসেন(২৫), মোঃ হাবিবুর রহমান’র পুত্র মোঃ
রেজাউল ইসলাম ইমন(২৪), মোঃ আবুল কালাম’র স্ত্রী মোসাঃ লাইলী আক্তার(৩০),
মৃত; লিলু মিয়ার পুত্র মোঃ রবিউল ইসলাম(১৯), মৃত ফারুক মিয়ার পুত্র সিএনজি
চালক মোঃ সোহেল রানা(৩০)।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীদ্বার থানার
উপ-পরিদর্শক (এস,আই) নাজমুল হাসান জানান, আটক ৫ আসামীকে বৃহস্পতিবার
কুমিল্লা ৪নং আমলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফারহানা সুলতানার আদালতে
হাজির করা হলে, বিকেল ৫টায় অভিযুক্তদের মধ্যে মোসঃ লাইলী বেগম ফাহিমা
হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদানকরেন, বাকী ৪
আসামীকে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৪দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ম্যাজিষ্ট্রেট তাদের জবানবন্দী নথিভূক্ত করে আসামীদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয়
করাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী হোছনা আক্তার তাঁর এজাহারে
উল্লেখ করেন, ১নং বিবাদী মোঃ আমির হোসেন আমার স্বামী ও অন্যান্য আসামীগন
আমার প্রতিবেশী হয়। আমাদের সংসারের একমাত্র কন্যা সন্তান ছিল ফাহিমা আক্তার
(৫) আমার স্বামী পেশায় একজন ট্রাক্টর চালক। আমার স্বামী মোঃ আমির হোসেন
প্রতিবেশী ৩ সন্তানের জননী লাইলী বেগমের সাথে অনৈতিক কাজ করার সময় আমার
মেয়ে ফাহিমা দেখে ফেলে এবং এ ঘটনার আমার নিকট জানিয়ে দেয়ার কথা বললে, ওরা
ঘটনার স্বাক্ষী নির্মূল করতে আমার মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং
পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
আমার একমাত্র কণ্যা ফাহিমা আক্তার গত ৭
নভেম্বর বিকেলে বাড়ির আঙ্গীনায় খেলতে যেয়ে নিখোঁজ হয়। ওই ঘটনায় নিজ গ্রামে,
স্বজনদের বাড়ি, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা খুজি করে এবং মাইকিং করে
না পেয়ে গত ১১ নভেম্বর আমার স্বামী মোঃ আমির হোসেন দেবীদ্বার থানায় একটি
নিখোঁজ ডায়েরী করেন।
গত ১৪ নভেম্বর ভোরে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৭
কিলোমিটার দূরে উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর গ্রামের নজরুল ইসলাম
মাষ্টারের বাড়ির সামনে ‘দেবীদ্বার-চান্দিনা’ সড়কের পাশের খাল সংলগ্ন একটি
ব্রীজের গোড়ায় বাজারের ব্যাগে মানুষের পা বেড়িয়ে থাকতে পথচারীরা দেখেন। পরে
পুলিশ সংবাদ পেয়ে আমার মেয়ের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেন। এসময় আমার
স্বামী-শ^শুর-শ^াশুরী শিশু উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে তার মাথার
চুল এবং গায়ের হলুদ গেঞ্জী দেখে সনাক্ত করেন ।
১৪ নভেম্বর ফাহিমার লাশ
উদ্ধারের পর আমার স্বামী মোঃ আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় অজ্ঞাত
আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলানং-১১)। মামলা দায়ের এবং লাশ
উদ্ধারের পর থেকেই এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে কুমিল্লা এলিট ফোর্স
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১ সিপিসি-২ এর উপ-পরিচালক মেজর
সাকিব হোসেন, পিবিআই’র উপ-পরিদর্শক(এসআই) মতিউর রহমান, দেবীদ্বার থানার
উপ-পরিদর্শক (এস,আই) নাজমুল হাসান সহ একাধিক টিম দফায় দফায় ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করেন।
র্যাব তাদের ছায়াতদন্ত সহ নানাভাবে হত্যাকান্ডের রহস্য
উদঘাটনের স্বার্থে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যাকান্ডে
সংশ্লিষ্টতায় আমার স্বামীসহ উল্লেখিত ৫জনকে আটক করেন। বুধবার র্যাব, পুলিশ
এবং স্থানীয়দের মুখে আমার মেয়ে হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা জানতে পারি।
পরবর্তীতে
লাইলী আক্তার’র সাথে আলোচনা স্বাপেক্ষে ৭ নভেম্বর রেজাউল, রবিউল, সুমন,
লাইলী আক্তার ও আমির হোসেন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ফাহিমাকে সোহেলের সিএনজিতে
করে ঘুরতে যায়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলে খাবারের কথা বলে গোমতী নদীর
রাস্তার পাশে মাসুমাবাদ এলাকায় একটি নির্জন স্থানের কলা বাগানে তাকে নিয়ে
সংঘবদ্ধ আসামীরা ছুরিকাঘাতে এবং শ^াসরোধে হত্যা করে। পরে ২৫ কেজি ওজনের ১টি
প্লাষ্টিকের গরুর খাবারের ব্যাগের ভিতরে ফাহিমার মরদেহ ঢুকায়। তবে রাস্তায়
সুবিধাজনক কোন জায়গা না পাওয়ায় রেজউল ইসলাম ইমন তার গরুর খামারের পাশের
একটি ড্রামে লুকিয়ে রাখে।
৯ নভেম্বর রাতে লাইলী আক্তার ছাড়া বাকী ৪
জন উপজেলার কাচিসাইর গ্রামের নির্জন ওই স্থানের কালভার্টের নিচে ভিক্টিমের
লাশ ভর্তি ব্যাগটি ফেলে আসেন। আমি আমার ঘাতক স্বামীসহ সকল খুণীদের
সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।