নিজস্ব
প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমার মধ্যে দিনে মৃত্যুও শূন্যে নেমেছে। ফলে
করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রায় ২০ মাস পর মৃত্যুহীন একটি দিন পার করল
বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার যে বুলেটিন দিয়েছে, তাতে গত ২৪ ঘণ্টায়
কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা শূন্য দেখানো হয়েছে। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা আগের
দিনের মতোই ২৭ হাজার ৯৪৭ জন রয়েছে।
গত এক দিনে ১৭৮ জনের মধ্যে নতুন করে
সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার
৮৮৯। এই সময়ে সেরে উঠেছে ১৯০ জন। তাদের নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা
দাঁড়াল ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬ জন। দৈনিক শনাক্তের হারও ১ দশমিক ১৮ শতাংশে নেমে
এসেছে। বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর
প্রথম মৃত্যুর খবর এসেছিল ১০ দিন পর ১৮ মার্চ।
মহামারী শুরুর ওই
পর্যায়ে দৈনিক মৃত্যু শূন্য, ১, ৩ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করার ১৫ দিন পর ৩
এপ্রিল সর্বশেষ মৃত্যুহীন দিনের খবর এসেছিল। তারপর মৃত্যুর সংখ্যা দিনকে
দিন বাড়তে থাকে।
গত বছরের শেষ দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও
করোনাভাইরাসের ডেল্টা সংক্রমণে এই বছরের এপ্রিলের পর মৃত্যু ও সংক্রমণ
দুটোই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। এর মধ্যে জুলাই-অগাস্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি
হয়। ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে
এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
ডেল্টা সংক্রমণের মধ্যে প্রতি পাঁচ দিনে
মৃত্যুর সংখ্যায় ১ হাজার যোগ হচ্ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে মহামারীর
ভয়াবহতা কমে আসায় গত ৬৭ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে নয়শ জন।
শীতের
শুরুতে ইউরোপ-আমেরিকায় নতুন করে সংক্রমণ ও মৃত্যুর বাড়ার মধ্যে বাংলাদেশে
উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গত এক মাসের হিসাবে
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।
জনস
হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত ২৮ দিনে ১৪১ জনের
মৃত্যু ঘটেছে, রোগী ধরা পড়েছে ৬ হাজার ৫৭২ জন। সেখানে এই সময়ে নেপালে ১৫৭
জনের, পাকিস্তানে ২৯৬ জনের, শ্রীলঙ্কায় ৫১২ জনের, ভারতে ১১ হাজার ৬৪১ জনের
মৃত্যু ঘটেছে।
আর গত ২৮ দিনে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৩৩ হাজার কোভিড রোগীর
মৃত্যু ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। রাশিয়ায় ঘটেছে ৩২ হাজার মৃত্যু। স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৯৩৭
জন।
অর্থাৎ, জানা হিসেবে এই সংখ্যক মানুষ এখন করোনাভাইরাস সংক্রমিত
অবস্থায় রয়েছে। অথচ তিন মাস আগেও এই সংখ্যা লাখের উপরে ছিল। স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ১৫ হাজার ১০৭টি নমুনা পরীক্ষা
হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ৬ হাজার ৬৬২টি নমুনা।
গত
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার (১ দশমিক ১৮ শতাংশ) আগের
দিনের চেয়ে কম, গত দিন তা ১ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা
অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। শনাক্ত অনুযায়ী মৃত্যুর হার ১
দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ডেল্টার সংক্রমণে সার্বিক শনাক্তের হার ৩২ শতাংশের উপরে
উঠেছিল। এর মধ্যে ২৮ জুলাই সর্বাধিক ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১২৯ জনই ঢাকা বিভাগের, যা মোট
আক্রান্তের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। দেশের ৩৯টি জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোনো
রোগী শনাক্ত হয়নি।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ এবং মুখে খাওয়ার
ওষুধ আসার মধ্যে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমলেও স্বাস্থ্যবিধিতে কোনো
ছাড় না দেওয়ার পরামর্শই দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।