দেশে খুনখারাবিসহ সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। আর এসব ঘটনায় ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। একই ধারায় সর্বশেষ ভয়ংকর হামলার ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা শহরের পাথরিয়াপাড়ায়। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলকে (৫০) তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর শরীরে মোট ৯টি গুলি লাগে। এ সময় তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাও গুলিতে নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন সেখানে উপস্থিত আরো অন্তত পাঁচজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ১০-১২ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত এই হামলা চালায়। এ সময় মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হলে স্থানীয় লোকজন প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। তখন দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। আগের দিন রবিবার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত ও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন। তাঁকে এভাবে দিনের বেলা কার্যালয়ে ঢুকে হত্যা করার পর দুর্বৃত্তদের বীরদর্পে চলে যাওয়া থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা দুর্বল এবং আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কতটা নাজুক। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেছেন, পর পর দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর সোহেল এলাকায় চলা মাদক কারবারের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে মাদক কারবারিরা তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে থাকতে পারে। এই মাদক কারবারও আমাদের আরেক বড় শঙ্কার কারণ। এবার ইউপি নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার অনেক বেশি হয়েছে বলে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়। এ সময় শুধু গুলিতেই নিহত হন ২২ জন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সারা দেশে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়। কিন্তু গত ৯ দিনে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে মাত্র আটটি।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। এর মধ্যে অনেক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও থাকছে। সম্প্রতি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে পাঁচটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে একে-৪৭ রাইফেলের গুলিও রয়েছে। একই সঙ্গে চারজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁরা অনেক দিন ধরেই ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসা অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অপরাধ তৎপরতায় দেশে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। তাই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান আরো জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। কুমিল্লার কাউন্সিলর সোহেল হত্যাসহ সাম্প্রতিক সময়ের সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দ্রুততর করতে হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।