বাংলাদেশকে
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে সুপারিশ করা হয়েছিল
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তা অনুমোদিত হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৬
ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের ‘কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি)’ ত্রিবার্ষিক
পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল বাংলাদেশ। গত বুধবার রাতে সেই
সুপারিশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভার
অনুমোদন লাভ করে। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য সম্মান ও
গৌরবের বিষয়। এখন উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায়
বাংলাদেশ পাঁচ বছরের একটি প্রস্তুতিমূলক সময় পাবে। প্রস্তুতি সময়ের পর ২০২৬
সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের এই উত্তরণ কার্যকর হবে।
জন্মলগ্নে
বাংলাদেশ ছিল একটি দরিদ্র ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মাত্র তিন বছরে (১৯৭২-৭৫
সময়কালে) দেশটি স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত হয়েছিল। সেই মহান নেতার
সুযোগ্যা কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে
বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে
বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেটি এই উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি শর্তই পূরণ
করতে সক্ষম হয়েছে। তাঁরই নেতৃত্বে বাংলাদেশ সহস্রাব্দের উন্নয়ন
লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের
দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে, ২০৩১ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ
এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছার। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ সেই
লক্ষ্য অর্জনে একইভাবে এগিয়ে যাবে।
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে
পারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। বিশ্বে এটি বাংলাদেশের
মর্যাদা অনেক গুণে বাড়িয়ে দেবে। আর তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়
কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।
আবার কিছু চ্যালেঞ্জও থাকবে। উন্নত দেশের বাজারে কিছু পণ্য রপ্তানিতে
বাংলাদেশ যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় তা না-ও থাকতে পারে। ওষুধ উৎপাদনে
প্যাটেন্টের ক্ষেত্রে যে ছাড় পাওয়া যায়, তা-ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেকেই
মনে করেন, আমাদের তৈরি পোশাক ও ওষুধশিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আবার অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি বন্ধ হওয়ার পর
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প সেখানে যেভাবে প্রতিযোগিতা করে টিকে থেকেছে,
একইভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও তারা সক্ষম হবে। অন্যদিকে আমাদের
রপ্তানি বাজার ক্রমেই বহুমুখী ও সম্প্রসারিত হচ্ছে। সরকারকে নীতি সহায়তাসহ
অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানির সম্প্রসারণের এই ধারা আরো
শক্তিশালী করতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উচ্চ
পর্যায়ের কমিটির আওতায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করে
দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একে আরো গতিশীল করতে হবে। ক্রমেই বেশিসংখ্যক
দেশের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদনের চেষ্টা করতে হবে।
উন্নয়নকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে।