নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির
কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র
মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, দলের লোকজনই আমাকে নির্বাহী কমিটির সদস্য
বানিয়েছেন। এখন তারা হয়তো আমার দোষ-ত্রুটি দেখেছেন; আমার গ্রহণযোগ্যতা নাই,
আমার কর্মকাণ্ডে হয়তো তারা সন্তোষ্ট নন- তাই আমাকে অব্যাহিত দেয়া হয়েছেন।
আমি এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। দলের সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নিয়েছি। তবে
আমাকে তো আর কুমিল্লার কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়নি। তাই আমি দল করবো।
তিনি বক্তব্যের আরেক পর্যায়ে বলেন, যার পার্টি সে আমাকে পার্টি করতে না করতেছে, আমি কেন পার্টি করবো?
মঙ্গলবার
বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে
মতবিনিময়কালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এসব কথা
বলেন।
তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই আমি মরহুম আকবর হোসেনের
হাত ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। এখনো দলটির রাজনীতির সাথে জড়িত। পরে
দলের লোকজনই আমাকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বানিয়েছেন। মেয়র হওয়ার
কারণে সবার সাথে মিলে-মিশে কথা বলে আমাকে চলতে হচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে আমি
আমার অবস্থানে সঠিক আছি। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, আমি জনগণের
জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর কাজ করতে হলে সবার সাথে মিলে মিশে আমাকে চলতে হবে।
সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য বিশাল বরাদ্দ এসেছে। উন্নয়ন হবে। ভবিষ্যতে
আমি মেয়র হই বা না হই- আমার একটাই তৃপ্তি, মেয়র থাকাকালীন একটা বিশাল
বরাদ্দ এনেছি। আর এ বরাদ্দ আনতে অনেক চেষ্টা করতে হয়েছে, সবাইকে ম্যানেজ
করতে হয়েছে।’
আমি কখনো দল পরিবর্তন করিনি- উল্লেখ করে মেয়র সাক্কু বলেন,
‘কথায় কাজে ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। ২০১২ সাল থেকে অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে
যাচ্ছি। পার্টিকে উঠানোর জন্য মেয়র ইলেকশন করে যাচ্ছি। আমার
কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অনেক বাঘা-বাঘা নেতৃবৃন্দের সাথে ফাইট দিতে হয়েছে।
আমি যা করেছি বা করছি- তা বিএনপির জন্যই। জনগণের জন্যও করি, দলের জন্যও
করি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হয়তো আমার বিষয়ে ভুল বোঝানো হয়েছে; তাই
তারা আমাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আমি যেহেতু ব্যস্ত থাকি- দল হয়তো এজন্য
আমার দরকার মনে করছে না। এতে আমার মনে কোনো রাগ ক্ষোভ নেই।’
তিনি বলেন,
‘মেয়র হওয়ায় নানা কারণে আমি হয়তো বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে
পারি না- কিন্তু আমার অনুসারী সকল নেতাকর্মী প্রতিটি কর্মসূচি পালন করে
আসছে। ৪০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। আমি এই দলের রাজনীতির সাথেই
থাকবো।’
মনিরুল হক সাক্কু বলেন সে দিন মন্ত্রী সাহেবের কাছে কেন গিয়েছি,
কুমিল্লার মানুষের জন্য গিয়েছি। ব্যক্তির জন্য যাই নি। একটু আগে সকালে
এমপি সাহেবের কাছে গিয়েছি। কেন গিয়েছি। বিএনপি ও আওয়ামীলীগের যুদ্ধ ছিল।
এই এমপি সাহেবের সাথে সবচেয়ে বেশি ঝগরা হয়েছে আমার। এমপি সাহেবের সাথে কেউ
যুদ্ধ করে থাকলে আমি যুদ্ধ করছি। এমপি সাহেবকে জেলে ডুকানোর দায়িত্ব আমার
ছিল। আমি ডুকাইছি। এই যুদ্ধগুলো আমি করেছি।
সেদিনের মিটিং প্রসঙ্গে
জানতে চাইলে মেয়র সাক্কু বলেন, ‘আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি
চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে
বলেছেন মিটিংয়ে থাকার জন্য, কিন্তু আমি থাকতে পারিনি। মিটিংটা
গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু যেতে পারিনি। পরিবর্তীতে আমি
কারণ দেখিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখলেই বুঝতে পারবেন- আমি সত্য না
মিথ্যা বলেছি। তারপরও দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে- আমি মেনে নিয়েছি। পদ-পবদীতে
কিছু যায় আসে না। তারেক রহমান সাহেব পার্টির মালিক, ওনি বাদ দিয়েছেন- আমার
কিছু করার নেই।’
অব্যাহতির কারণ দর্শানো সম্পর্কে মেয়র সাক্কু বলেন,
‘যেই বৈঠকের কথা উল্লেখ করে আমাকে কারণ দর্শানোর কথা বলা হচ্ছে, সেই দিন
আমার দিনের কার্যবিবরনী দেখা হোক। সেদিন কি কোন কাজ ছিলো কি না, আমেরিকার
রাষ্ট্রদূত এসেছিলো কি না সেটা যাচাই করে দেখতে পারেন তারা। আমাদের দলের
একটি সংবিধান আছে- সেটা হলো ব্যক্তি থেকে দল বড়, দল থেকে দেশ বড়। দলের
সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর কুমিল্লা সিটি
মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে
অব্যাহতি দেয়া হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত
একটি চিঠির মাধ্যমে তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে দলীয়
কর্মসূচীতে অংশগ্রহন সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে এই অব্যাহতি প্রদান করা হয়
বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের
নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় সভা করে বিএনপি। সে বৈঠকে আমন্ত্রন জানানো হয়
কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্যদেরও। কিন্তু তিনি সেখানে যান নি। মূলত দলীয়
কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয়তা ও হাই কমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করায় তাকে এই
অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।