১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি জাতি। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাধ্য হয়েছিল আত্মসমর্পণ করতে। বাঙালি জাতি ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছিল। গত বৃহস্পতিবার জাতি মহাসমারোহে সেই মহাবিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে। সব শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে ৫০ বছরের অগ্রযাত্রাকে। জাতি নতুন করে শপথ নিয়েছে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। একসময় যে পাকিস্তানের সঙ্গে উন্নয়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশের কোনো তুলনাই হতো না, আজ সমাজ-অর্থনীতির প্রায় সব সূচকেই বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০২০’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বিশ্বে সর্বাধিক এগিয়ে থাকা শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় ৩ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে (৭৩-৭৪) দেশের জিডিপির আকার ছিল সাত হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চের (সিবিইআর) ২০২০ সালের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১তম বড় অর্থনীতির দেশ।
গত পাঁচ দশকে মানুষের গড় আয়ু ৪৭ থেকে বেড়ে ৭২.৮ বছর হয়েছে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ ইউএস ডলার, এখন তা হয়েছে দুই হাজার ২৫৪ ইউএস ডলার। ১৯৭০-৭১ সালে যেখানে নারীশিক্ষার হার ছিল মাত্র ২৮ শতাংশ, সেখানে আজ নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছেই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, অবকাঠামো উন্নয়ন—অনেক দিক থেকেই বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে নজির সৃষ্টি করে চলেছে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। শিক্ষার মানসম্মত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। এখনো বেকারত্বের হার অনেক বেশি। কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। দুর্নীতি এখনো উন্নয়নের পথে বড় বাধা। দুর্নীতি হ্রাসে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আইনের শাসন আরো শক্তিশালী করতে হবে। গণতন্ত্রচর্চা বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা কমানোর উদ্যোগ এখন থেকেই নিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।