
আজ
শুভ বড়দিন। দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক
মহামানব যিশু জেরুজালেমের কাছে বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন।
হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার
জন্যই যিশু আবির্ভূত হয়েছিলেন। যিশুর জন্মদিন তাই শুধু খ্রিস্টান
সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সারা মানবজাতির জন্যই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
যিশুখ্রিস্ট সারা জীবন আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করে
গেছেন। হিংসা-দ্বেষ ভুলে তিনি সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে
আবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খ্রিস্টীয় মতে, যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং
জগতের সব মানুষের ত্রাণকর্তা। প্রতিবছর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ
সাড়ম্বরে ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে থাকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসবটি। বড়দিনের কর্মসূচি শুধু আনন্দ-উৎসবের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ থাকেনি কখনো। কিন্তু এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। এবার সারা বিশ্বেই
কভিড বাস্তবতায় উদযাপিত হচ্ছে বড়দিন। বিশ্বমারি কভিড-১৯ পৃথিবীকে এক বড়
ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। আজ তাই উৎসবের আমেজের মধ্যেও থাকছে প্রিয়জন হারানোর
বেদনা।
যিশুখ্রিস্ট পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের দেখিয়েছেন আলোকিত পথ। তিনি
বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে দিয়েছেন বাঁচার অনুপ্রেরণা। মানবজাতিকে
পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তিনি ফেরাতে চেয়েছিলেন মমতা, ভালোবাসা ও ক্ষমাশীলতার
পথে। মানবসেবার অন্যতম আদর্শ তিনি। যিশুর পথ ছিল সংযম, সহিষ্ণুতা ও
ভালোবাসার। মানুষের নৈতিক দৈন্যের কারণে সারা বিশ্বে আজ হিংসা, হানাহানি ও
অশান্তি বেড়েই চলেছে। বড়দিনের বাণী এই দৈন্য ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার
জন্য। প্রতিটি ধর্মেরই মূল বাণী হলো মানবতাবোধ। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও
আশার বাণী প্রচার করা হয়, তারও মূলে রয়েছে মানবতা। বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে
সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও ক্ষুদ্রজাতি একসঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস
করে আসছে বলেই সব স্রোত এক ধারায় এসে মিলিত হয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে করেছে
সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। বাঙালি সংস্কৃতির মূল কথা হলো, অসাম্প্রদায়িকতা ও
সম্প্রীতি। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাঙালি
সংস্কৃতি ও চেতনা এর মূল চালিকাশক্তি।
বড়দিন শুধু একটি উৎসবই নয়,
সৌহার্দের উদাহরণ সৃষ্টি করার দিন। বড়দিন প্রত্যেক মানুষকে শান্তি, প্রেম ও
সম্প্রীতির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুক, এটাই সবার কাম্য। পৃথিবী থেকে বিদায়
নিক হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদের মতো নিকৃষ্ট সব চিন্তাধারা। আজ এই
পবিত্র উৎসবের দিনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক
শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এই উৎসব সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠুক। ভালোবাসার
বিস্তার ঘটাক সবার মনে। মারিমুক্ত বিশ্বের প্রার্থনা করি আমরা। শান্তি ও
সম্প্রীতির বন্ধন হোক। শুভ বড়দিন।