বাংলাদেশের
অর্থনীতিতে প্রবাস আয়ের গুরুত্ব এখনো অনেক বেশি। করোনা মহামারির মধ্যেও গত
অর্থবছরে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের বৃদ্ধি আমাদের আশান্বিত করেছিল।
কিন্তু চলতি অর্থবছরে প্রবাস আয়ের যে নেতিবাচক ধারা আমরা দেখতে পাচ্ছি তা
অনেকটাই হতাশাজনক। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রবাস
আয় কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। নভেম্বর মাসে প্রবাস আয় এসেছে মাত্র ১৫৫ কোটি
ডলার, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রবাস আয় এভাবে কমার জন্য
বিশেষজ্ঞরা বিদেশ থেকে বৈধ পথে অর্থ প্রেরণের অতিরিক্ত খরচকেই বেশি দায়ী
করছেন। এ অবস্থায় বৈধ পথে প্রবাস আয় বাড়াতে খরচ কমানোর সুপারিশ করেছে
বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি তারা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের
গত জুন মাসের তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে বৈধ পথে বাংলাদেশে ১০০ ডলার বা
সাড়ে আট হাজার টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের গড়ে প্রায় ৩৫০ টাকা খরচ হয়। গত
আগস্ট থেকে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এই খরচ আরো বেড়েছে। বর্তমানে
বৈধভাবে একই পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠালে সরকারের প্রণোদনা বাবদ পাওয়া যায়
প্রায় ১৭০ টাকা। এটা বাদ দিলেও ১০০ ডলার দেশে পাঠাতে খরচ হয় ১৮০ টাকা।
অন্যদিকে হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে খরচ হয় খুবই কম, কখনো কখনো কোনো খরচই হয় না।
হুন্ডিতে টাকা পাঠালে ডলারের বিনিময় হারও বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে আন্ত
ব্যাংক লেনদেনে এক ডলারে পাওয়া যায় ৮৬ টাকার কম। কিন্তু খোলাবাজারে পাওয়া
যায় ৯০ থেকে ৯১ টাকা। এভাবে ডলারে কম টাকা পাওয়া এবং পাঠানোর খরচ বেশি
হওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে নিরুৎসাহ হচ্ছেন। তাঁরা বেশি করে
হুন্ডির আশ্রয় নিচ্ছেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে যাওয়াসহ রাষ্ট্র
নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হুন্ডির অর্থে যেমন চোরাচালান বৃদ্ধি পায়,
তেমনি জঙ্গি অর্থায়নসহ আরো অনেক অপরাধ তৎপরতায় এই অর্থ ব্যবহৃত হয়।
বৈধ
পথে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব সুপারিশ করেছে
দ্রুত সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রবাস আয় পাঠানোর খরচ কমানোর পাশাপাশি
ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাস আয় পাঠালে ২ শতাংশ হারে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়,
সেটি আরো বাড়ানো যায় কি না ভেবে দেখতে হবে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি
বাড়ানো এবং দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় করার মাধ্যমে হুন্ডির জোয়ার ঠেকানোর
উদ্যোগ নিতে হবে।