জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী,কারুকন্ঠ আবৃত্তি পাঠশালার অর্ধ যুগ পূর্তি উপলক্ষে গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে কুমিল্লা টাউনহলে ২ দিন ব্যাপী বার্ণাঢ্য আবৃত্তি উৎসবের আয়োজন করে কারুকন্ঠ আবৃত্তি পাঠশালা ।
উৎসবের প্রথম দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি মহোদয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মঞ্চ সারথী আতাউর রহমান (একুশে ও স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত), বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল আলম (স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত) বিকেল চার টায় টাউনহল মাঠ থেকে শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল আলম। বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধান অতিথি টাউন হল মাঠে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু আর্ট ক্যাম্প,কারুকন্ঠ বই মেলা, জাগ্রত মানবিকতার রক্ত দান কর্মসূচি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শ্রাবণ প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত ১০০ টি বই এর মেলা উদ্বোধন করেন এবং শিখা প্রদীপ প্রজ্বলন করেন। এরপর টাউনহল মঞ্চে কারুকন্ঠ আবৃত্তি পাঠশালার সদস্যদের পরিবেশনায় ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটির উদ্ধোধনী আবৃত্তির মধ্য দিয়ে সন্ধায় টাউন হল মঞ্চের কার্য্যক্রম শুরু হয়। তারপর সবাই দাঁড়িয়ে সমস্বরে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। এই পুরো অনুষ্ঠানটি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হয়। তাই জাতীয় সংগীত এর পর ৭ই মার্চ এর ভাষণের অংশ বিশেষ ও শোন একটি মুজিবুরের কন্ঠ থেকে....গানটি নৃত্য সহযোগে উপস্থাপন করা হয়। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর কবিতা বীরদ্রোহীর সাথে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এরপর মাননীয় প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। প্রদীপ প্রজ্বলন এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধান অতিথি। তারপর কারকন্ঠ পদক ২০১৯ প্রদান করা হয় অধ্যক্ষ হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক কে,২০২০ প্রদান করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক জেলা কালচার অফিসার বসীর উল আনোয়ারকে ,২০২১ মরণোত্তর পদক প্রদান করা হয় ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকীকে। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আবৃত্তি পারে সমাজকে ভিতর থেকে বদলে দিতে। তিনি আরো বলেন, ২৫-২৬ ডিসেম্বর কুমিল্লা যেন এক টুকরো বাংলাদেশ হয়েছে, কারণ ৬৪ জেলার আবৃত্তি শিল্পীরা এই উৎসবে অংশ নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা হচ্ছে শান্তি ও সম্প্রীতির শহর, যার প্রমাণ আজকের এই আয়োজন। তিনি সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিশাল এই আয়োজনের জন্য কারুকন্ঠ আবৃত্তি পাঠশালা ও সংগঠনের সভাপতি আবু নাছের মানিককে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের সভাপতি আবু নাছের মানিক দুই দিনের আয়োজনে সবাইকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানেন। এরপর শুরু হয় বর্ণাঢ্য আবৃত্তি অনুষ্ঠানের। এ দিন কুমিল্লাসহ ৩৩ টি জেলার ৬০ জন আবৃত্তি শিল্পী আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
২য় দিন ২৬ শে ডিসেম্বর রবিবারের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল চারটায়। এই পর্বে কুমিল্লার ১০ জন কবি তাদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন, পাশাপাশি সংগঠনের শিল্পী ও আমন্ত্রিত শিল্পীরা আবৃত্তি করেন।
সন্ধ্যায় জাতীয় সংগীত ও বাঁশিতে দেশের গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যা পর্বের কার্যক্রম। এই পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান মেহেরুন্নেসা বাহার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা আবৃত্তি জোটের সভাপতি বদরুল হুদা জেনু, জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ আয়াজ মাবুদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক শেখ জহিরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, কারুকন্ঠের এই আয়োজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হাতকে শক্তিশালী করবে এবং কুমিল্লার আবৃত্তি চর্চকে আরো বেগবান করবে। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের জন্য তিনি কারুকন্ঠ আবৃত্তি পাঠশালাকে ধন্যবাদ জানান। সবার সভাপতি আবু নাছের মানিক সবাইকে কারুকন্ঠের পাশে থাকবার আহ্বান জানিয়ে আলোচনা সভার সমাপ্তি টানেন।জ্ঞনের প্রতিক হিসেবে একটি বই কারুকন্ঠের শিল্পীদের হাতে তুলে দেন প্রধান অতিথি মেহেরুন্নেসা বাহার।
এর পর কুমিল্লাসহ ৩১ টি জেলার ৬৩ জন আবৃত্তি শিল্পী অংশ নেন। আবৃত্তির পর পর টাউন হল প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য আতস বাজি ও ফানুস উড়ানো হয়।
বঙ্গবন্ধু আর্ট ক্যাম্প,কারুকন্ঠের বই মেলা, জাগ্রত মানবিকতার রক্ত দান কর্মসূচি,শ্রাবণ প্রকাশনীর বঙ্গবন্ধু কে প্রকাশিত ১০০ টি বই এর মেলা, বর্ণাঢ্য আলোক সজ্জা এবং মঞ্চে কুমিল্লাসহ ৬৪ টি জেলার ১২৩ জন আবৃত্তি শিল্পীর আবৃত্তি পরিবেশন হয়। শিল্পীদের আবৃত্তি পরিবেশনা মাতিয়ে রেখেছিলো কুমিল্লা টাউন হল মঞ্চ। যেন ভরা জোয়ার এসেছিলো কুমিল্লার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। হাজার বছরের কুমিল্লার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক নব সংযোজন কারুকন্ঠের আয়োজিত এই আবৃত্তি উৎসব। এই অনুষ্ঠানেই প্রমাণ করে কুমিল্লা শান্তি ও সম্প্রীতির শহর,এখানে মৌলবাদের কোন স্থান নেই।