তানভীর দিপু:
আত্মীয়ের
জানাজায় যাবার পথে কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের লাকসাম এলাকায় সড়ক
দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী ও মেয়ে সহ একই পরিবারের ৪ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে,
গুরুতর আহত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন একজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কুমিল্লামুখী নোয়াখালী টু সিলেট বিআরটিসি বাসের
সাথে বিপরীতমুখী একটি সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এই প্রাণাহানির
ঘটনা ঘটে। ঘন কুয়াশা এবং একই লেনে বিপরীত মুখী দুই পাশের যান চলাচলের কারণে
এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে পুলিশ।
পুলিশ ও
নিহতের স্বজনের জানান, কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পরতি গ্রামের অটোরিকশা
চালক বাহালুল আলম(৫০), তার স্ত্রী পারুল বেগম(৪০), এক বছরের শিশুকন্যা ও
তার শ^াশুড়ি গোলাপ নাহার(৭০)সহ ভোরে সিএনজিতে করে রওনা হয়েছিলেন ফেণীর
দাগভুইয়ায়। সেখানে তাদের এক আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু
পথেই লাকসাম এলাকায় কুমিল্লামুখী বিআরটিসি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়
সিএনজিটির। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাহালুল ও তার শ^াশুড়ি। হাসপাতালে নেয়ার
পথে মৃত্যুবরণ করেন তার স্ত্রী ও শিশুকন্যা।
দুর্ঘটনার পর সিএনজি ও
বিআরটিসি বাসটিকে উদ্ধার করে লাকসাম হাইওয়ে ক্রসিং থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
মরদেহগুলোকেও নিয়ে আসা হয় থানায়। পরে দুপুরে নিহত বাহালুলের দুই মেয়ে
ফাতেমা ও হাজেরার উপস্থিতিতে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাবা,
মা, বোন ও নানীকে হারিয়ে হতবাক বাহালুলের মেয়েরা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে
বাহালুলের বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার জানান, সকাল ভোরে ছোট বোনকে নিয়ে বাবা মা
ফেনীতে আমাদের এক আত্মীয়ের মারা গেছে তাকে দেখতে রওনা হয়েছিলো। জানাজায় অংশ
নিয়ে বিকালে ফিরবে। অথচ বিকালে তাদের জানাযা হচ্ছে। এর চেয়ে বড় কষ্ট
পৃথিবীতে কি হতে পারে।
নিহত অটোরিকশা চালক বাহালুল মিয়ার বড় মেয়ে
ফাতেমা আক্তার স্থানীয় পরতি ফাজিম মাদ্রাসায় আলিম বর্ষের শিক্ষার্ধী, মেঝ
মেয়ে মরিয়ম আক্তার পরতি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ও আরেক
মেয়ে হাজেরা বেগম পরতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীতে লেখাপড়া করছে।
নিহত
বাহালুলের জেষ্ঠাতো ভাই ইসমাইল হোসেন জানান, তাঁর চার মেয়ে ছিলো। এক মেয়ে
স্ত্রীসহ সে মারা যাওয়ায় তিন মেয়েকে দেখার আর কেউ রইলো না। অটো চালিয়ে কোন
রকম দিন যাপন করতো বেলাল। সহায় সম্বল কিছু নেই।
নিহত বাহালুলের স্বজন
মাহবুব আলম জানান, হতদরিদ্র অটো চালক বাহালুলের তিন কণ্যা সন্তানই লেখাপড়া
করে। সে আটো চালিক রিক্সা চালিয়ে কোন রকম দিনযাপন করতো। সহায় সম্বল কিছু
নাই। এখন তাঁর শিশুকণ্যাদের দেখার মত আর পরিবারে আর কেউ নেই। আমাদের দাবী,
পরিবারটিকে যেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।
লাকসাম হাইওয়ে ক্রসিং
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাকসুদ আহাম্মদ জানান, কুমিল্লা নোয়াখালী
মহাড়কের একলেনে নির্মান কাজ চলতে থাকায় অপর লেনেই চলছিলো দুই পথের চলাচল।
এছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে ঘটে থাকতে পারে এই দুর্ঘটনা।
এদিকে আহত সিএনজি
চালক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহতদের মরদেহ
স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।