করোনা মহামারির
কারণে বিশ্ব অর্থনীতি আজ রীতিমতো বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতিও
ধারাবাহিকভাবে নানা ধরনের সংকট মোকাবেলা করছে। মহামারি কিছুটা প্রশমিত হয়ে
আবার নতুন করে বিস্তার লাভ করছে। এই অবস্থায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের
বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন-২০২২ প্রকাশিত হয়েছে গত মঙ্গলবার। তাতে বলা হয়,
চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা হবে কর্মসংস্থান ও জীবিকার
সংকট। এ ছাড়া পরিবেশ বিপর্যয়, সাইবার দুর্বলতা, ডিজিটাল বৈষম্যও অর্থনীতির
ঝুঁকির তালিকায় থাকছে। প্রতিবেদনের পূর্বাভাসগুলো নিঃসন্দেহে আমাদের
নীতিনির্ধারকদের বিশেষ মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে।
দুই বছর ধরে চলে আসা
করোনা মহামারির সময় আন্তর্জাতিক বাজার সংকুচিত হয়েছে এবং আমাদের রপ্তানি
নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে। লকডাউন ও বিধি-নিষেধের কারণে অনেক ব্যবসা
ও শিল্প-কারখানা চরম দুরবস্থায় পড়েছে। ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
অনেক ুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়েছেন। এসব কারণে দরিদ্র মানুষ
আরো দরিদ্র হয়ে পড়ছেন। সমাজে বৈষম্য শুধুই বাড়ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই
বৈষম্য বৃদ্ধির সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। সানেম ও ব্র্যাক বিআইজিডি
গত প্রায় দুই বছরে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু জরিপ
করেছে। তাদের জরিপে একটি বিষয় পরিষ্কার, দেশের অনেক মানুষের আয় কমেছে। অনেক
মানুষ আবার তুলনামূলকভাবে উচ্চ দতার কাজ থেকে নি¤œ দতার কাজ নিতে বাধ্য
হয়েছেন। এসবই সমাজে বৈষম্য বাড়াচ্ছে। এই বৈষম্য আরো ত্বরান্বিত করছে উচ্চ
মূল্যস্ফীতি। গত কয়েক মাসে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবার বড়
সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সংকট মোকাবেলায় এখনই দ্রুত পদপে নেওয়া
প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ
সৃষ্টি করেছে জলবায়ু পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের
চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবেলা করা না গেলে আমাদের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা মুখ
থুবড়ে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসও বলছে, বিশ্ব
অর্থনীতি ক্রমেই খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। ২০২১ সালেও বৈশ্বিক
প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৫ শতাংশ। এ বছর সেই প্রবৃদ্ধি কমে ৪.১ শতাংশ হবে। এই
বৈশ্বিক সংকট বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকেও তিগ্রস্ত করতে পারে। যদিও
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ শিরোনামের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ
হতে পারে। তা সত্ত্বেও প্রতিবেদনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ ও সরবরাহ চেইনে বিঘœ ঘটার জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি
লণীয়ভাবে গতিহীন হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে
আরো সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত পদপে গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের
সাম্প্রতিক অগ্রগতি সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই অগ্রগতিকে টেকসই রূপ
দিতে হবে। করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনের তিকর প্রভাবসহ আরো অনেক
চ্যালেঞ্জই সামনে আসবে এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তা মোকাবেলা করতে হবে।
একই সঙ্গে সমাজের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।