বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার
করুণ অবস্থা জানতে কোনো নিগূঢ় গবেষণার প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন সংবাদপত্র ও
বেসরকারি টেলিভিশনের সচিত্র প্রতিবেদনেই বেরিয়ে আসছে সরকারি ও বেসরকারি
হাসপাতালে চিকিৎসার করুণ চিত্র। শনিবার জাতীয় দৈনিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর
রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কিডনি
রোগীদের ভোগান্তির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানে নতুন
কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সপ্তাহে
ছয় দিন দুই পালায় ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চালু রেখেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না।
শহীদ
জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট নেফ্রোলজি
বিভাগে ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু হয়। শুরুতে ডায়ালাইসিস ইউনিটে যন্ত্র ছিল
মাত্র দুটি। বর্তমানে ২০টি যন্ত্র চালু করেও রোগীদের সামাল দিতে পারছে না
কর্তৃপক্ষ। বগুড়ায় দুটি বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করা
হয়; যাতে একবারের জন্য দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা। অন্যদিকে
সরকারি হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে ফি দিতে হয় ৪৭০ টাকা।
যেসব
মানুষের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাঁরা বেশি অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি
হাসপাতালে, এমনকি বিদেশে গিয়েও চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু জনগণের বৃহত্তর
অংশ গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর সরকারি হাসপাতালই একমাত্র ভরসা।
উল্লেখ্য, কিডনি রোগ চিকিৎসার দুটি পদ্ধতি আছে। প্রথমটি হলো কিডনি
প্রতিস্থাপন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়টি হলো নিয়মিত ডায়ালাইসিস। কিডনি
বিভাগে একজন করে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক, একজন করে রেজিস্ট্রার ও সহকারী
রেজিস্ট্রার এবং পাঁচজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ রয়েছে।
সহযোগী অধ্যাপক ও রেজিস্ট্রারের পদ ছাড়া বাকি সব পদ শূন্য। মেডিসিন বিভাগের
একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ইন্টার্ন চিকিৎসক নিয়ে চলছে বিভাগের কার্যক্রম।
পদ সৃষ্টি ও শূন্য পদে জনবল চেয়ে দফায় দফায় চিঠি পাঠিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হয়,
তাও নেই হাসপাতালটিতে।
এ দৃশ্য কেবল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ
হাসপাতাল নয়, দেশের প্রায় সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ডায়ালাইসিস
করতে আসা রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অনেকে চিকিৎসা না নিয়েই ফেরত
যান। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ও
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পূর্বঘোষণা ছাড়াই গত বুধবার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও
হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস বন্ধ করে
দেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন রোগীদের
স্বজনেরা। পরে জানা যায়, এই দুই হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসা
হচ্ছিল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে। তারা বিল বকেয়ার
অজুহাতে আকস্মিকভাবে সেবা বন্ধ করে দেয়।
যেখানে রোগীদের জীবন-মৃত্যুর
প্রশ্ন জড়িত, সেখানে সরকারি হাসপাতালে ইজারাপ্রথা বন্ধ করা জরুরি। সরকারি
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতেই না পারে, সেই বিভাগ খুলে
রেখেছে কেন? বাংলাদেশে সব সরকারি হাসপাতালে কমবেশি পদ শূন্য আছে, এগুলো
জরুরি ভিত্তিতে তা পূরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও
যন্ত্রপাতিও দিতে হবে।